পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে «ο» বস্তুকে তার শত্রুপক্ষ লজ্জা দিয়ে বলে, তুমি স্কুল। তাই, হয় তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে নয় মায়া৷আবরণ পরে বেড়াতে হয়। যেরকম অবস্থা তাতে সে জোর করে বলতে পারে না যে, ই আমি স্কুল, কেননা আমি সত্য, আমি মাংস, আমি প্রবৃত্তি, আমি ক্ষুধা, নির্লজ্জ নির্দয়- যেমন নির্লজ্জ নির্দয় সেই প্রচণ্ড পাথর যা বৃষ্টির ধারায় পাহাড়ের উপর থেকে লোকালয়ের মাথার উপরে গড়িয়ে এসে পড়ে, তার পরে যে বীচুক আর যে মরুক। আমি সমস্তই দেখতে পাচ্ছি। ঐ-যে পর্দা উড়ে উড়ে পড়ছে ; ঐ-যে দেখতে পাচ্ছি। রাস্তায় যাত্রার সাজসজ্জা চলছে! ঐ-যে লাল ফিতেটুকু, ছোট্ট এতটুকু, রাশি রাশি ঘষা চুলের ভিতর থেকে একটুখানি দেখা যাচ্ছে, ও যে কালবৈশাখীর লোলুপ জিহ্বা, কামনার গোপন উদ্দীপনায় রাঙা ! ঐ-যে পাড়ের এতটুকু ভঙ্গি, ঐ-যে জ্যাকেটের এতটুকু ইঙ্গিত, আমি যে স্পষ্ট অনুভব করছি তার উত্তাপ | অথচ এসব আয়ােজন অনেকটা অগোচরে হচ্ছে এবং অগোচরে থাকছে, যে করছে সেও সম্পূর্ণ জানে না। ’ . ا۔ কেন জানে না ? তার কারণ, মানুষ বরাবর বাস্তবকে ঢাকা দিয়ে দিয়ে বাস্তবকে স্পষ্ট করে জািনবার এবং মানবার উপায় নিজের হাতে নষ্ট করেছে। বাস্তবকে মানুষ লজ্জা করে। তাই মানুষের তৈরি রাশি-রাশি ঢাকাটুকির ভিতর দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে নিজের কাজ করতে হয় ; এইজন্যে, তার গতিবিধি জানতে পারি নে, অবশেষে হঠাৎ যখন সে একেবারে ঘাড়ের উপরে এসে পড়ে তখন তাকে আর অস্বীকার করবার জো থাকে না । মানুষ তাকে শয়তান বলে বদনাম দিয়ে তাড়াতে চেয়েছে, এইজন্যেই সাপের মূর্তি ধরে স্বৰ্গেদ্যানে সে লুকিয়ে প্রবেশ করে, আর কানে কানে কথা কয়েই মানবপ্ৰেয়সীর চােখ ফুটিয়ে দিয়ে তাকে বিদ্রোহী করে তােলে। তার পর থেকে আর আরাম নেই, তার পরে মরণ আর কি ! , আমি বস্তুতন্ত্র। উলঙ্গ বাস্তব আজ ভাবুকতার জেলখানা ভেঙে আলোকের মধ্যে বেরিয়ে আসছে, এর পদে পদেই আমার আনন্দ ঘনিয়ে উঠছে। যাচাই সে খুব কাছে আসবে, তাকে মোটা করে পাব, তাকে শক্ত করে ধরব, তাকে কিছুতেই ছাড়ব না- মাঝখানে যা কিছু আছে তা ভেঙে চুরমার হয়ে ধুলোয় লুটবে, হাওয়ায় উড়বে, এই আনন্দ, এই তো আনন্দ, এই তো বাস্তবের তাণ্ডবনৃত্য- তার পরে মরণ-বাচন, ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ তুচ্ছ! তুচ্ছ! তুচ্ছ! - আমার মন্ধীরানী স্বপ্নের ঘোরেই চলছে, সে জানে না কোন পথে চলছে। সময় আসবার আগে তাকে হঠাৎ জানিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়া নিরাপদ নয়। আমি যে কিছুই লক্ষ করি নে এইটে জানানােই ভালো। সেদিন আমি যখন খাচ্ছিলুম মন্ধীরানী আমার মুখের দিকে একরকম করে তাকিয়ে ছিল, একেবারে ভুলে গিয়েছিল এই চেয়ে-থাকার অর্থটা কী। আমি হঠাৎ এক সময়ে তার চোখের দিকে চােখ তুলতেই তার মুখ লাল হয়ে উঠল, চােখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলে। আমি বললুম, আপনি আমার খাওয়া দেখে একেবারে অবাক হয়ে গেছেন। অনেক জিনিস লুকিয়ে রাখতে পারি, কিন্তু আমার ঐ লোভটা পদে পদে ধরা পড়ে। তা দেখুন, আমি যখন নিজের হয়ে লজ্জা করি নে তখন । আপনি আমার হয়ে লজ্জা করবেন না। DB DD BBB BBB DD DBDB u DBB DBDBBDDS DDS DDS DBBDS আমি বললুম, আমি জানি লোভী মানুষকে মেয়েরা ভালোবাসে, ঐ লোভের উপর দিয়েই তো মেয়েরা তাদের জয় করে। আমি লোভী, তাই বরাবর মেয়েদের কাছ থেকে আদর পেয়ে পেয়ে আজ আমার এমন দশা হয়েছে যে আর লজ্জার লেশমাত্র নেই। অতএব আপনি একদৃষ্টি অবাক হয়ে আমার খাওয়া দেখুন-না। আমি কিছু কেয়ার করি নে। এই উঁটাগুলির প্রত্যেকটিকে চিবিয়ে একেবারে নিঃসত্ত্ব করে ফেলে দেব। তবে ছাড়ব, এই আমার স্বভাব। আমি কিছুদিন আগে আজকালকার দিনের একখানি ইংরেজি বই পড়ছিলুম, তাতে স্ত্রীপুরুষের মিলন,নীতি সম্বন্ধে খুব স্পষ্ট-স্পষ্ট বাস্তব কথা আছে। সেইট আমি ওদের বৈঠকখানায় ফেলে গিয়েছিলুম। একদিন দুপুরবেলায় আমি কী জন্যে সেই ঘরে ঢুকেই দেখি মন্ধীরানী সেই বইটা হাতে