পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে । (፩oዓ আমি বললুম, কী করা যাবে ? ছবি তো কোনোমতেই ছবির চেয়ে ভালো হয় না। ও যা তাই মন্ধী একখানা বই খুলে তার পাতা ওলটাতে লাগল। আমি বললুম, আপনি যদি রাগ করেন আমি ওর ফাকটা কোনোরকম করে ভরিয়ে দেব। BBD DDBD DDD S DBB S DD DDD BBB S DBBBB BB DDSDDS BDDO সেইরকম ছিল। তখনো ইহকাল-পরকালের অনেক জিনিস বিশ্বাস করতুম। বিশ্বাসে ঠকায় বটে, কিন্তু ওর একটা মস্ত গুণ এই- ওতে মনের উপর একটা লাবণ্য দেয়। নিখিলের ছবির পাশে আমার ছবি রইল, আমরা দুই বন্ধু। নিখিলেশের আত্মকথা আগে কোনোদিন নিজের কথা ভাবি নি। এখন প্ৰায় মাঝে-মাঝে নিজেকে বাইরে থেকে দেখি । বিমল আমাকে কেমন চোখে দেখে সেইটো আমি দেখবার চেষ্টা করি। বড়ো গভীর, সব জিনিসকে বড়ো বেশি গুরুতর করে দেখা আমার অভ্যাস । আর-কিছু না, জীবনটাকে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়ার চেয়ে হেসে উড়িয়ে দেওয়াই ভালো। তাই করেই তো চলছে। সমস্ত জগতে আজ যত দুঃখ ঘরে বাইরে ছড়িয়ে আছে তাকে তো আমরা মনে মনে ছায়ার মতো মায়ার মতো উড়িয়ে দিয়ে তবেই অনায়াসে নাচ্ছি খাচ্ছি; তাকে যদি এক মুহূর্ত সত্য বলে ধরে রেখে দেখতে পারতুম তা হলে কি মুখে অন্ন রুচিত না চোখে ঘুম থাকত ? কেবল নিজেকেই সেই সমস্ত উড়ে-যাওয়া ভেসে-যাওয়ার দলে দেখতে পারি নে। মনে করি কেবল আমারই দুঃখ জগতের বুকে অনন্তকালের বোঝা হয়ে হয়ে জমে উঠছে। তাই এত গভীর, তাই নিজের দিকে তাকালে দুই চক্ষের জলে বক্ষ ভেসে যায়। ওরে হতভাগা, একবার জগতের সদরে দাড়িয়ে সমস্তর সঙ্গে আপনাকে মিলিয়ে দেখােনা সেখানে যুগযুগন্তের মহামেলায় লক্ষকোটি লোকের ভিড়ে বিমল তোমার কে ? সে তোমার স্ত্রী ! কাকে বল তোমার স্ত্রী ? ঐ শব্দটাকে নিজের ফুয়ে ফুলিয়ে তুলে দিন রাত্রি সামলে বেড়ােচ্ছ, জানো বাইরে থেকে একটা পিন ফুটলেই এক মুহুর্তে হাওয়া বেরিয়ে গিয়ে সমস্তটা চুপসে যাবে। আমার স্ত্রী, অতএব ও আমারই! ও যদি বলতে চায় ‘না, আমি আমিই তখনই আমি বলব, সে কেমন করে হবে, তুমি যে আমার স্ত্রী ! স্ত্রী ! ওটা কি একটা যুক্তি ! ওটা কি একটা সত্য ! ঐ কথাটার মধ্যে একটা আস্ত মানুষকে আগাগোড়া পুরে ফেলে কি তালা বন্ধ করে রাখা যায় ? স্ত্রী ! এই কথাটিকে যে আমার জীবনের যা-কিছু মধুর, যা-কিছু পবিত্র সব দিয়ে বুকের মধ্যে মানুষ করেছি, একদিনও ওকে ধুলোর উপর নামাইনি। ঐ নামে কত পূজার ধূপ, কত সাহানার বাঁশি, কত । বসন্তের বকুল, কত শরতের শেফালি ! ও যদি কাগজের খেলার নীেকার মতো আজ হঠাৎ নর্দমার ঘোলা জলে ডুবে যায় তা হলে সেই সঙ্গে আমার ঐ দেখো, আবার গভীৰ্য ! কাকে বলছি নর্দমা, কাকে বলছি ঘোলা জল ? ও-সব হল রাগের কথা । তুমি রাগ করবে বলেই জগতে এক জিনিস আর হবে না। বিমল যদি তোমার না হয় তো সে তোমার নয়ই, যতই চাপাচাপি রাগারগি করবে ততই ঐ কথাটাই আরো বড়ো করে প্রমাণ হবে। বুক ফেটে যায় যে ! তা যাক। তাতে বিশ্ব দেউলে হবে না, এমন-কি তুমিও দেউলে হবে না। জীবনে মানুষ যা-কিছু হারায় তার সকলের চেয়েও মানুষ অনেক বেশি বড়ো ; সমস্ত কান্নার সমুদ্র পেরিয়েও তার পার আছে ; এইজন্যেই সে কাদে, নইলে কঁাদতও না । কিন্তু সমাজের দিক থেকে- সে-সব কথা সমাজ ভাবুক গে, যা করতে হয় করুক। আমি আমার আপনি কান্না, সমাজের কান্না নয়। বিমল যদি বলে সে আমার স্ত্রী নয়, তা হলে আমার