পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ どかじ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমায় ভালো বাসবে না। সে এই যদি তার ছিল জানা, তবে কি তার উচিত ছিল আমার-পানে দৃষ্টি হানা ? তেমন-তেমন অনেক মানুষ আছে তো এই ধরাধামে (যদিচ ভাই, আমি তাদের গনি নেকে মানুষ নামে)— যাদের কাছে সে যদি তার খুলে দিত প্ৰাণের ঢাকা, আমি তো নাই তাদের মতন সে কথা সে জানত মনে যখন মোরে বঁধিল ধ’রে বিদ্ধ করে নয়নকোণে । না মক্ষীরানী, তুমি মিথ্যে খুঁজছ ; নিখিল বিবাহের পর থেকে কবিতা-পড়া একেবারে ছেড়ে দিয়েছে, বোধ হয় ওর আর দরকার হয় না । আমি ছেড়ে দিয়েছিলুম কাজের তাড়ায়, কিন্তু বোধ হচ্ছে যেন “কাব্যজুরো মনুষ্যাণাং আমাকে ধরবে-ধরবে করছে। আমার স্বামী বললেন, আমি তোমাকে সতর্ক করে দিতে এসেছি। সন্দীপ । সন্দীপ বললে, কাবাজুর সম্বন্ধে ? স্বামী ঠাট্টায় যোগ না দিয়ে বললেন, কিছুদিন ধরে ঢাকা থেকে মৌলবি আনাগোনা করতে আরম্ভ করেছে, এ অঞ্চলের মুসলমানদের ভিতরে ভিতরে খেপিয়ে তোেলবার উদ্যোগ চলেছে । তোমার উপর ওরা বিরক্ত হয়ে আছে, হঠাৎ একটা-কিছু উৎপাত করতে পারে । পালাতে পরামর্শ দাও নাকি ? আমি খবর দিতে এসেছি, পরামর্শ দিতে চাই নে । আমি যদি এখানকার জমিদার হতুমি তা হলে ভাবনার কথা হত মুসলমানদেরই, আমার নয় । তুমি আমাকেই উদবিগ্ন করে না তুলে ওদের দিকে যদি একটু উদবেগের চাপ দাও তা হলে সেটা তোমার এবং আমার উভয়েরই যোগ্য হয় | জান, তোমার দুর্বলতায় পাশের জমিদারদের পর্যন্ত তুমি দুর্বল করে ठूलZछ ? সন্দীপ, আমি তোমাকে পরামর্শ দিই নি, তুমিও আমাকে পরামর্শ না দিলে চলন্ত । ওটা বৃথা হচ্ছে । আর-একটি কথা আমার বলবার আছে! তোমরা কিছুদিন থেকে দলবল নিয়ে আমার প্রজাদের পরে ভিতরে ভিতরে উৎপাত করছি ; আর চলবে না, এখন তোমাকে আমার এলেকা ছেড়ে চলে যেতে হবে । এমন ভয় আছে যে ভয় না থাকাই কাপুরুষতা, আমি সেই ভয় থেকেই বলছি তোমাকে যেতে হবে সন্দীপ । আর দিন-পাচেক পরে আমি কলকাতায় যাচ্ছি, সেই সময় তোমারও আমার সঙ্গে যাওয়া চাই । আমাদের কলকাতার বাড়িতে থাকতে পাের, তাতে কোনো বাধা নেই । আচ্ছা, পাচ দিন ভাববার সময় পাওয়া গেল । ইতিমধ্যে মক্ষীরানী, তোমার মাউচাক থেকে বিদায় হবার গুঞ্জনগান করে নেওয়া যাক ! হে আধুনিক বাংলার কবি, খোলো তোমার দ্বার, তোমার বাণী লুঠ গান আমার ; এই বলে তার বেসুর-ঘেঁষা মোটা ভাঙা গলায় ভৈরবীতে গান ধরলে— মধুঝতু নিত্য হয়ে রইল তোমার মধুর দেশে । যাওয়া-আসার কান্নাহাসি হাওয়ায় সেথা বেড়ায় ভেসে | যায় যে জনা সেই শুধু যায়, ফুল ফোটা তো ফুরোয় না হায় ঝরবে যে ফুল সেই কেবলি ঝরে পড়ে বেলাশেষে । যখন আমি ছিলেম কাছে তখন কত দিয়েছি গান ; এখন আমার দূরে যাওয়া, এরও কি গো নাই কোনো দান ?