পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে 69 পুষ্পবনের ছায়ায় ঢেকে এই আশা তাই গেলেম রেখে আগুন-ভরা ফাগুনকে তোর কাদায় যেন আষাঢ় এসে ৷ ” সাহসের অন্ত নেই, সে সাহসের কোনো আবরণও নেই- একেবারে আগুনের মতো নগ্ন । তাকে বাধা দেওয়ার সময় পাওয়া যায় না ; তাকে নিষেধ করা যেন বজকে নিষেধ করা, বিদ্যুৎ সে নিষেধ হেসে উড়িয়ে দেয়। আমি বাইরে বেরিয়ে এলুম। বাড়ির ভিতরের দিকে যখন চলে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি অমূল্য কোথা থেকে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। বললে, রানীদিদি, তুমি কিছু ভেবো না। আমি চললুম, কিছুতেই নিম্বফল হয়ে ফিরব না । আমি তার নিষ্ঠাপূৰ্ণ তরুণ মুখের দিকে চেয়ে বললুম, অমূল্য, নিজের জন্য ভাবিব না, যেন তোমাদের জন্যে ভাবতে পারি | অমূল্য চলে যাচ্ছিল, আমি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলুম, অমূল্য, তোমার মা আছেন ? আছেন । r বোন ? নেই, আমি মায়ের একমাত্র ছেলে । বাবা আমার অল্প বয়সে মারা গেছেন । যাও তুমি, তোমার মায়ের কাছে ফিরে যাও অমূল্য। দিদি, আমি যে এখানে আমার মাকেও দেখছি আমার বোনকেও দেখছি। আমি বললুম, অমূল্য, আজ রাত্রে যাবার আগে তুমি এখান থেকে খেয়ে যেয়ো । সে বললে, সময় হবে না দিদিরানী, তোমার প্রসাদ আমার সঙ্গে দিয়ে আমি নিয়ে যাব । তুমি কী খেতে ভালোবাস অমূল্য ? মৃত্যুকাছ থাকলে পৰে পেট ভরোপিঠ থেমে ফিরে এস তােমাৰ হাঙ্গে তাঁর পিঠ ঘৰ নিখিলেশের আত্মকথা রাত্রি তিনটের সময় জেগে উঠেই আমার হঠাৎ মনে হয়, যে জগতে আমি একদিন বাস করতুম সে যেন মরে ভূত হয়ে আমার এই বিছানা, এই ঘর, এই সব জিনিসপত্র দখল করে বসে আছে। আমি বেশ বুঝতে পারলুম মানুষ কেন পরিচিত লোকের ভূতকেও ভয় করে। চিরকালের জানা যখন এক মুহূর্তে অজানা হয়ে ওঠে তখন সে এক বিভীষিকা। জীবনের সমস্ত ব্যবহার যে সহজ স্রোতে চলছিল আজ তাকে যখন এমন খাদে চালাতে হবে যে খাদ এখনো কাটা হয় নি। তখন বিষম ধাধা লেগে যায় ; তখন নিজের স্বভাবকে বাঁচিয়ে চলা শক্ত হয় ; তখন নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আমিও বুঝি আর-একজন কেউ । " · কিছুদিন থেকে বুঝতে পারছি সন্দীপের দলবল আমাদের অঞ্চলে উৎপাত শুরু করেছে। যদি আমার স্বভাবে স্থির থাকতুম তা হলে সন্দীপকে জোরের সঙ্গে বলতুম, এখান থেকে চলে যাও । কিন্তু গোলেমালে অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছি। আমার পথ আর সরল নেই। সন্দীপকে চলে যেতে বলার মধ্যে আমার একটা লজ্জা আসে। ওর সঙ্গে আর-একটা কথা এসে পড়ে ; তাতে নিজের কাছে ছােটাে शश शाश् । * দাম্পত্য আমার ভিতরের জিনিস, সে তো কেবল আমার গৃহস্থ আশ্রম বা সংসারযাত্রা নয়। সে আমার জীবনের বিকাশ । সেইজন্যেই বাইরের দিক থেকে ওর উপরে একটুও, জোর দিতে পারলুম। না; দিতে গেলেই মনে হয়, আমার দেবতাকে অপমান করছি। এ কথা কাউকে বােঝাতে পারব না। আমি হয়তাে অদ্ভুত। সেইজনেই হয়তাে ঠাকলুম। কিন্তু আমার বাইরেকে ঠকা থেকে বীচাতে গিয়ে