পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ॥ (१११ ।। সম্মোহনে সম্মোহনে কাটাকাটি । এর বাণ শব্দভেদী বাণ। আবার, নিঃশব্দভেদী বাণও আছে। এতদিন পরে এই লড়াইয়ে সন্দীপের সমকক্ষ মিলেছে। তােমার তুণে অনেক বাণ আছে রণরঙ্গিণী ! পৃথিবীর মধ্যে দেখলুম, কেবল তুমিই সন্দীপকে আপনি ইচ্ছামতে ফেরাতে পারলে, আবার আপনি ইচ্ছামতে । টেনে আনলে । শিকার তো এসে পড়ল। এখন একে নিয়ে কী করবে বলে। একেবারে নিঃশেষে । মারবে, না তোমার খাচায় পুরে রাখবে ? কিন্তু আগে থাকতে বলে রাখছি রানী, এই জীবটিকে বধ করাও যেমন শক্ত, বন্ধ করাও তেমনি। অতএব দিব্য অস্ত্ৰ তোমার হাতে যা আছে তার পরীক্ষা করতে ळ्लिक्ष (८ । । সন্দীপের মনের ভিতরে একটা পরাভাবের সংশয় এসেছে বলেই সে আজ এমন অনর্গল বকে গেল। আমার বিশ্বাস, ও জানত আমি অমূল্যকেই ডেকেছি ; বেহারা খুব সম্ভব তারই নাম বলেছিল ; ও তাকে ফাকি দিয়ে নিজে এসে উপস্থিত হয়েছে। আমাকে বলতে দেবার সময় দিলে না যে, ওকে ডাকি নি, অমূল্যকে ডেকেছি। কিন্তু আস্ফালন মিথ্যে, এবার দুর্বলকে দেখতে পেয়েছি। এখন আমার জয়লব্ধ জায়গাটির সূচ্যগ্ৰভূমিও ছাড়তে পারব না। - আমি বললুম, সন্দীপবাবু, আপনি গল গল করে এত কথা বলে যান কেমন করে ? আগে থাকতে বুঝি তৈরি হয়ে আসেন ? এক মুহুর্তে সন্দীপের মুখ রাগে লাল হয়ে উঠল। আমি বললুম, শুনেছি কথকদের খাতায় নানা রকমের লম্বা লম্বা বর্ণনা লেখা থাকে, যখন যেটা যেখানে দরকার খাটিয়ে দেয়। আপনার সেরকম খাতা আছে নকি ? ? সন্দীপ চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে লাগল, বিধাতার প্রসাদে তোমাদের তো হাবভাব-ছলাকলার অন্ত নেই, তার উপরেও দর্জির দোকান স্যাকরার দোকান তোমাদের সহায়, আর বিধাতা কি আমাদেরই এমনি নিরন্ত্র করে রেখেছেন যে— * আমি বললুম, সন্দীপবাবু, খাতা দেখে আসুন ; এ কথাগুলো ঠিক হচ্ছে না। দেখছি। এক-একবার | আপনি উল্টোপাল্টা বলে বসেন ; খাতা-মুখস্থর ঐ একটা মস্ত দোষ । সন্দীপ আর থাকতে পারলে না ; একেবারে গর্জে উঠল, তুমি ! তুমি আমাকে অপমান করবে ! তোমার কী না আমার কাছে ধরা পড়েছে বলে তো ! তোমার যে ওর মুখ দিয়ে আর কথা বেরোল না। সন্দীপ যে মন্ত্রব্যবসায়ী, মন্ত্র যে-মুহূর্তে খাটে না সে-মুহূর্তেই ওর আর জোর নেই ; রাজা থেকে একেবারে রাখাল হয়ে যায়। দুর্বল ! দুৰ্বল ! ও যতই রূঢ় হয়ে উঠে কর্কশ কথা বলতে লািগল ততই আনন্দে আমার বুক ভরে উঠল। আমাকে বীধবার নাগপাশ ওর ফুরিয়ে গেছে, আমি মুক্তি পেয়েছি। বঁচা গেছে, বাচা গেছে! অপমান করো, আমাকে অপমান করো, এইটেই তোমার সত্য । আমাকে স্তব কোরো না, সেইটেই মিথ্যা । . এমন সময় আমার স্বামী ঘরের মধ্যে এলেন। অন্য দিন সন্দীপ মুহূর্তেই আপনাকে যে-রকম । সামলে নেয়। আজ তার সে শক্তি ছিল না। আমার স্বামী তার মুখের দিকে চেয়ে একটু আশ্চর্য হলেন । আগে হলে আমি এতে লজ্জা পেতুম। কিন্তু স্বামী যাই মনে করুন-না। আমি আজ খুশি হলুম। আমি ঐ দুর্বলকে দেখে নিতে চাই। J আমরা দুজনেই স্তব্ধ হয়ে রইলুম দেখে আমার স্বামী একটু ইতস্তত করে চৌকিতে বসলেন ; বললেন, সন্দীপ, আমি তোমাকেই খুঁজছিলুম, শুনলুম এই ঘরেই আছ। সদীপ কথাটার উপর একটু বিশেষ ঝোক দিয়ে বললে, হাঁ, মন্ধীরানী সকলেই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি যে মাউচকের দাসমক্ষিকা, কাজেই হুকুম শুনেই সব কাজ ফেলে চলে আসতে ठूल । স্বামী বললেন, কাল কলকাতায় যাচ্ছি, তোমাকে যেতে হবে । সন্দীপ বললে, কেন বলে দেখি। আমি কি তোমার অনুচরা নাকি ? ? 8|N©ዔ