পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሱbrbr রবীন্দ্র-রচনাবলী তবে আবার ফিরিয়ে দিলে কেন ? র্যার হুকুমে ফিরিয়ে দিলুম তাকে ডাকুন, তার সামনে আমি বলব। ठिनिी (क ? ছোটোরানীদিদি ৷ বিমলকে ডেকে পাঠলুম। সে একখানি সাদা শাল মাথার উপর দিয়ে ফিরিয়ে গা ঢেকে আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে ঢুকলা ; পায়ে জুতোও ছিল না। দেখে আমার মনে হল বিমলকে এমন যেন আর কখনো দেখি নি ; সকালবেলাকার চাদের মতো ও যেন আপনাকে প্ৰভাতের আলো দিয়ে ঢেকে Տ(*{{ջ : অমূল্য বিমলের পায়ের কাছে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্ৰণাম করে পায়ের ধুলো নিলে । উঠে দাঁড়িয়ে বললে, তোমার আদেশ পালন করে এসেছি দিদি ৷ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি । বিমল বললে, বাঁচিয়েছ ভাই । অমূল্য বললে, তোমাকে স্মরণ করেই একটি মিথ্যা কথাও বলি নি । আমার বন্দেমাতরং মন্ত্র রইল তোমার পায়ের তলায় | ফিরে এসে এই বাড়িতে ঢুকেই তোমার প্রসাদও পেয়েছি। বিমলা এ কথাটা ঠিক বুঝতে পারলে না । অমূল্য পকেট থেকে রুমাল বের করে তার গ্রন্থি খুলে সঞ্চিত পিঠেগুলি দেখালে ; বললে, সব খাই নি, কিছু রেখেছি— তুমি নিজের হাতে আমার পাতে তুলে দিয়ে খাওয়াবে ব'লে এইগুলি জমানো আছে । আমি বুঝলুম, এখানে আমার আর দরকার নেই ; ঘর থেকে বেরিয়ে গেলুম ; মনে ভাবলুম, আমি তো কেবল বকে বকেই মরি, আর ওরা আমার কুশুপুত্তলির গলায় ছেড়া জুতোর মালা পরিয়ে নদীর ধারে দাহ করে | কাউকে তো মরার পথ থেকে ফেরাতে পারি নে, যে পারে সে ইঙ্গিতেই পারে । আমরা দীপ জ্বালাতে পারব না ; আমার জীবনের ইতিহাসে সেই কথাটাই প্রমাণ হল, আমার সাজানো আবার আস্তে আস্তে আন্তঃপুরে গেলুম ! বোধ হয় আর-একবার মেজোরানীর ঘরের দিকে আমার মনটা ছুটিল ; আমার জীবন ও এ সংসারে কোনো একটা জীবনের বীণায় সত্য এবং স্পষ্ট আঘাত দিয়েছে এটা অনুভব করা আজ আমার যে বড়ো দরকার ; নিজের অস্তিত্বের পরিচয় তো নিজের মধ্যে পাওয়া যায় না, বাইরে আর- কোথাও যে তার খোজ করতে হয় । মেজোরানীর ঘরের সামনে আসতেই তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, এই যে ঠাকুরপো, আমি বলি বুঝি তোমার আজও দেরি হয় । আর দেরি নেই, তোমার খাবার তৈরি রয়েছে, এখনই আসছে । আমার শোবার ঘরের দিকে যেতে যেতে মেজোরানী জিজ্ঞাসা করলেন, দারোগা যে এল, সেই চুরির কোনো আশকরা হল না কি ? সেই ছ হাজার টাকা ফিরে পাবার ব্যাপারটা মেজোরানীর কাছে আমার বলতে ইচ্ছে হল না । আমি বললুম, সেই নিয়েই তো চলছে । লোহার সিন্দুকের ঘরে গিয়ে পকেট থেকে চাবির গোড়া বের করে দেখি সিন্দুকের চাবিটাই নেই । অদ্ভুত আমার অন্যমনস্কতা ! এই চাবির রিং নিয়ে আঙ সকাল থেকে কতবার কত বাক্স খুলেছি, আলমারি খুলেছি, কিন্তু একবারও লক্ষ্যই করি নি যে, সে চাবিটা নেই। মেজোরানী বললেন, চাবি কই ? আমি তার জবাব না করে এ পকেট ও পকেট নাড়া দিলুম, দশবার করে সমস্ত জিনিসপত্র ইটকে খোঁজাখুঁজি করলুম। আমাদের বোঝবার বাকি রইল না যে, চাবি হারায় নি, কেউ একজন রিং থেকে খুলে নিয়েছে । কে নিতে পারে y এ ঘরে তো