পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে (SV) দিনের আলো শেষ হয়ে এল। জানলার সামনে পশ্চিম দিগন্তে গােয়ালপাড়ার ফুটন্ত শজনেগাছটার পিছনে সূর্য অন্ত গেল। সেই সূর্যাস্তের প্রত্যেক রেখাটি আজও আমি চােখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। অস্তমান সূর্যকে কেন্দ্র করে একটা মেঘের ঘটা উত্তরে দক্ষিণে দুই ভাগে ছড়িয়ে পড়েছিল একটা প্ৰকাণ্ড পাখির ডানা মেলার মতো- তার আগুনের রঙের পালকগুলো থাকে-থাকে সাজানাে। মনে হতে লাগল। আজকের দিনটা যেন হুহু করে উড়ে চলেছে রাত্রের সমুদ্র পার হবার ଐ(n) । 爆 অন্ধকার হয়ে এল। দূর গ্রামে আগুন লাগলে থেকে থেকে যেমন তার শিখা আকাশে লাফিয়ে উঠতে থাকে তেমনি বহু দূর থেকে এক-একবার এক-একটা কলরবের ঢেউ অন্ধকারের ভিতর থেকে যেন ফেপে উঠতে লািগল । لم ঠাকুরঘর থেকে সন্ধ্যারতির শঙ্খ ঘণ্টা বেজে উঠল। আমি জানি মেজোরানী সেই ঘরে গিয়ে জোড়হাত করে বসে আছেন। আমি এই রাস্তার ধারের জানলা ছেড়ে এক পা কোথাও নড়তে পারলুম। : না। সামনেকার রাস্তা, গ্রাম, আরো দূরেকার শস্যশূন্য মাঠ এবং তারও শেষ প্রান্তে গাছের রেখা ঝাপসা হয়ে এল। রাজবাড়ির বড়ো দিঘিটা অন্ধের চোখের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। বা দিকের ফটকের উপরকার নবতখানাটা উচু হয়ে দাঁড়িয়ে কী-যেন একটা দেখতে পাচ্ছে। রাত্ৰিবেলাকার শব্দ যে কতরকমের ছদ্মবেশ ধরে তার ঠিকানা নেই। কাছে কোথায় একটা ডাল নড়ে, মনে হয় দূরে যেন কে ছুটে পালাচ্ছে। হঠাৎ বাতাসে একটা দরজা পড়ল, মনে হল সেটা যেন সমস্ত আকাশের বুক ধড়াস করে ওঠার শব্দ । মাঝে মাঝে রাস্তার ধারের কালো গাছের সারের নীচে দিয়ে আলো দেখতে পাই, তার পরে আর দেখতে পাই নে ৷৷ ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনি, তার পরে দেখি ঘোড়সওয়ার রাজবাড়ির গেট থেকেই বেরিয়ে ছুটে চলছে। 戟 কেবলই মনে হতে লাগল, আমি মরলেই সব বিপদ কেটে যাবে । আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি সংসারকে আমার পাপ নানা দিক থেকে মারতে থাকবে । মনে পড়ল, সেই পিস্তলটাি বাক্সের মধ্যে আছে, কিন্তু এই পথের ধারের জানলা ছেড়ে পিস্তল নিতে যেতে পা সরল না, আমি যে আমার ভাগ্যের প্রতীক্ষা করছি। রাজবাড়ির দেউড়ির ঘণ্টায় ঢং ঢেং করে দশটা বাজল । তার খানিক পরে দেখি রাস্তায় অনেকগুলি আলো, অনেক ভিড়। অন্ধকারে সমস্ত জনতা এক হয়ে জুড়ে গিয়ে মনে হল একটা প্রকাণ্ড কালো অজগর ঐকেবেঁকে রাজবাড়ির গেটের মধ্যে ঢুকতে আসছে। al দেওয়ানজি দূরে লোকের শব্দ শুনে গেটের কাছে ছুটে গেলেন। সেই সময় একজন সওয়ার এসে পীেছতেই দেওয়ানজি ভীতস্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, জটাধর খবর কী ? সে বললে, খবর ভালো নয় । প্ৰত্যেক কথা উপর থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলুম। তার পরে কী চুপিচুপি বললে, শোনা গেল না। "བ་ তার পরে একটা পান্ধি আর তারই পিছনে একটা ডুলি ফটকের মধ্যে ঢুকল। পান্ধির পাশে পাশে মথুর ডাক্তার আসছিলেন। দেওয়ানজি জিজ্ঞাসা করলেন, ডাক্তারবাবু, কী মনে করেন ? ডাক্তার বললেন, কিছু বলা যায় না। মাথায় বিষম চোট লেগেছে। আর অমূল্যবাবু ? -- র্তার বুকে গুলি লেগেছিল, তার হয়ে গেছে। 8 by