পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\οΟ Ο রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রতারণা ! কী অপূর্ব দুঃসাহসিকতা ! 'সংবাদসার’ বলেন‘রামধন্যবাবু যে নেউগিপাড়ার শ্যামাচরণ ত্ৰিবেদী তাঁহাতে সন্দেহ নাই। শ্যামাচরণবাবুর টাকা নাই বটে, কিন্তু আমরা সন্ধান লইয়াছি তাহার মধ্যম ভ্রাতুষ্পপুত্রের মাথায় অল্প অল্প টাক পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে | এরূপ ব্যক্তিগত উল্লেখ অতিশয় নিন্দনীয় | আমার নিজেরই গোলমাল ঠেকিতেছে। আমার প্রবন্ধ যে হরিহরপুর মুনিসিপালিটির বিরুদ্ধে লিখিত তৎসম্বন্ধে সম্মার্জনী'র যুক্তি একেবারে অকাটা । হরিহরপুর চব্বিশ-পরগনায় না। তিব্বতে না হাসখালি সাবডিবিজনের অন্তর্গত আমি কিছুই অবগত নাহি ; সেখানে যে মুনিসিপালিটি আছে বা ছিল বা ভবিষ্যতে হইবে তােহা আমার স্বপ্নের অগোচর । অপর পক্ষে, আমার প্রবন্ধে আমি নেউগিপাড়ার শ্যামাচরণ ত্ৰিবেদী মহাশয়ের প্রতি অনায় কটাক্ষপাত করিয়াছি, এ সম্বন্ধেও সন্দেহ করা কঠিন । ‘সংবাদসার এমনি নিবিড়ভাবে প্রমাণ প্রয়োগ করিয়াছেন যে, তাহার মধ্যে ছুচ চালাইবার জো নাই । আমি একজনকে চিনি বটে, কিন্তু সে বেচারা ত্ৰিবেদী নয়, মজুমদার ; তার বাড়ি নেউগিপাড়ায় নয়, ঝিনিন্দহে ; আর তাঁর ভ্রাতুষ্পপুত্রের মাথায় টাক থাকা চুলায় যাক, তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্ৰই নাই, দুইটি ভাগিনেয় আছে বটে । যাহারা বলেন আমি বরাকারের পাথুরিয়া কয়লার খনির মালেকদের চরিত্রের কালিমার সহিত উক্ত কয়লার তুলনা করিয়াছি, তাহারা অনুগ্রহ করিয়া উক্ত খনি আছে কি না এবং কোথায় আছে এবং থাকিলেই বা কী, যদি খোলসা করিয়া সমস্ত আমাকে লিখিয়া পাঠান। তবে খনিরহসা সম্বন্ধে আমার অজ্ঞতা দূর হইয়া যায়। যিনি যাহাই বলুন "লুনের টাক্স ‘বিধবাবিবাহ’ কিংবা গাওয়া ঘি' সম্বন্ধে যে আমি কিছুই বলি নাই তাহা শপথ করিয়া বলিতে পারি } এ দিকে ঘরেও গোল বাধিয়াছে ; গভীর চিন্তাশীলতার পরিচয়স্বরূপ আমি এক জায়গায় লিখিয়াছিলাম, এ জগৎটা পশুশালা । আমার ধারণা ছিল যে পাঠকেরা হাসিবে । অন্তত তিন জন পাঠক যে হাসেন নাই তাহার প্রমাণ পাইয়াছি। প্রথমত শ্যালক আসিয়া আমাকে গািল পড়িল ; সে কহিল, নিশ্চয়ই আমি তাহাকে পশু বলিয়াছি । আমি কহিলাম, বলিলে অপরাধ হয় না, কিন্তু তোমার পশুপতিবাবু থাকিয়া থাকিয়া রাগে তাহার গোফজোড়া বিড়ালের ন্যায় ফুলাইয়া তুলিতেছেন । তিনি বলেন তাহকে শ্যালক সম্বোধন করিয়া অনধিকারচর্চা করিয়াছি, এবং লোকসমাজে তিনি আমার সম্বন্ধে যে-সকল আলোচনা করিতেছেন তাহা সুশ্রাব্য নয় ; এ দিকে পাকড়াশি-বাড়ির জগৎবাবু চা কৃত্রিম দৃষ্টান্ত রচনা করিতেছিলেন, এমন সময়ে যেমনি পড়িলেন জগৎটা পশুশালা আমনি হাস্যের বেগ হঠাৎ থামিয়া গিয়া গলায় চা বাধিয়া গেল— লোকে ভাবিল, ডাক্তার ডাকিবার সবুর সহিবে না । পাড়াসুদ্ধ লোকের ধারণা যে, আমার প্রবন্ধে আমি তাহদেরই পরমপূজনীয় জ্যাঠা, খুড়শ্বশুর অথবা ভগ্নীজামাই সম্বন্ধে কোনো-না-কোনো সত্য কথার আভাস দিয়াছি ; তাহারাও আমার ক্ষণভঙ্গুর মাথার খুলিটার উপরে লক্ষপাত করিবে এমন কথা প্রকাশ করিতেছে । আমার প্রবন্ধের গভীর অভিপ্ৰায়টি যে কী তৎসম্বন্ধে আমার কথা তাহারা বিশ্বাস করিতেছে না, কিন্তু আমার প্রতি তাহদের অভিপ্ৰায় যে কী তৎসম্বন্ধে তাঁহাদের কথা অবিশ্বাস করিবার কোনো হেতু আমার পক্ষে নাই । বস্তুত তাহদের ভাষা ভাষাও বদলানাে আবশ্যক। আর যাহাই করি লােককে হাসাইবার চেষ্টা করিব না। રે તે રે