পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| \9Q R রবীন্দ্র-রচনাবলী কথামালার নূতন-প্রকাশিত গল্প একদা কয়েকজন কাঠুরিয়া এক পার্বত্য সরল বৃক্ষের শাখাচ্ছেদনে মনােযোগী হইয়াছিল। শ্রম লাঘব করিবার অভিপ্ৰায়ে বিস্তর পরামর্শ পূর্বক তাহার এক নূতন কৌশল অবলম্বন করিল। যে শাখা ছেদনের আবশ্যক কয়েকজনে মিলিয়া তাহারই উপর চড়িয়া বসিল এবং নিভৃতে বসিয়া সতর্কতার সহিত অস্ত্ৰচালনা করিতে লাগিল । যথাসময়ে শাখা ছিন্ন হইয়া পড়িল এবং কাঠুরিয়া কয়েকটিও তৎসঙ্গে ভূতলে পড়িয়া পঞ্চােত্ব প্রাপ্ত হইল । কাঠুরিয়ার সর্দার এই সংবাদ-শ্রবণে অধীর হইয়া সেই তরুসমীপে উপস্থিত হইল এবং কুঠার আস্ফালন করিয়া কহিল, ‘তুমি যে অপরাধ করিয়াছ আমি তাহার বিচার করিতে চাহি ।” বনস্পতি সাতিশয় বিস্মিত হইয়া কহিল, ‘হে জনপুঙ্গব, আমার স্কন্ধের উপর আরোহণ করিয়া আমারই শাখাচ্ছেদন করিয়াছ, এক্ষণে কে কাহার বিচার করিবে ? মানব আরক্তলোচনে কহিল, “আমার কয়েকজন কাঠুরিয়া যে অকালে কালগ্রাসে পতিত হইল, তাহার জন্য কেহই দণ্ড পাইবে না। এ কখনো হইতে পারে না ।” করিয়া যেরূপ কাণ্ড করিয়াছিলেন, আশ্চৰ্য্য কাৰ্যনৈপুণ্যবশত অবিলম্বেই তাহার ফললাভ করিয়াছেন— আমি মূঢ় বৃক্ষ, তাহার প্রতিবিধান করি এমন সাধ্য ছিল না।" মানব কহিল, “কিন্তু তোমারই শাখা ভাঙিয়া পড়িয়াছিল, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই ।” বনস্পতি কহিল, “সে কথা যথার্থ, কারণ আমারই শাখায় তাহারা কুঠারাঘাত করিয়াছিলেন এবং প্রকৃতির নিয়ম অনিবার্য।’ মানব সুযুক্তিসহকারে কহিল, ‘অতএব তোমাকেই দণ্ড স্বীকার করিতে হইবে । তোমার যাহা-কিছু বক্তব্য আছে বলিতে থাকে, আমি এক্ষণে কুঠারে শান দিতে চলিলাম।” তাৎপয অনবধানবশত যদি ইহঁচট খাইয়া থাক, চৌকাঠকে পদাঘাত করিবে । সেই জড়পদার্থের পক্ষে এই একমাত্র সুবিচার । Rdbr প্রাচীন দেবতার নূতন বিপদ মীটিঙে প্ৰায় সকল দেবতাই একযোগে স্ব স্ব কর্মে রিজাইন দিতে উদ্যত হইলেন । পিতামহ ব্ৰহ্মা বৈদিক ভাষায় উদাত্ত অনুদাত্ত এবং স্বরিত সংযোগপূর্বক কহিলেন, ‘ভো ভো দেবগণ শৃশ্বস্তু। “আমার কথা স্বতন্ত্র। আমি তো এই বিশ্বসৃষ্টি এবং বেদ রচনা সমাপ্ত করিয়া সমস্ত কাজকর্ম ছাড়িয়া দিয়া পেনশন লইয়াছি। এমন-কি, আমার কাছে আর কোনাে প্রত্যাশা নাই বলিয়া সকলে আমার পূজা পর্যন্ত বন্ধ করিয়াছে। এবং আমার প্রথম বয়সের বিশ্ব এবং বেদ – নামক দুটাে রচনা লইয়া লোকে নিৰ্ভয়ে স্ব স্ব ভাষায় অনুবাদ এবং সমালোচনা করিতে আরম্ভ করিয়াছে। কেহ বলে, রচনা মন্দ হয় নাই, কিন্তু আরো ঢের ভালো হইতে পারিত ; কেহ বলে, আমাদের হাতে যদি প্রফ-সংশোধনের ভার থাকিত তাহা হইলে ছত্ৰে ছত্রে এত মুদ্রাকর প্রমাদ থাকিত না । আমি চুপ করিয়া থাকি, মনে মনে তাহাদের সম্বোধন করিয়া বলি, বাবা, ঐ আমার প্রথম রচনা | তোমরা অবশ্য আমার চেয়ে অনেক