পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१४० রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যই তো কবির বর্ণনার বিষয় নয়। প্রকৃতির ভীষণত্ব, প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা, সে তো বর্ণনীয়। কিন্তু সেও আমাদের হৃদয়ের জিনিস, প্রকৃতির জিনিস নয়। অতএব, এমন কোনো বর্ণনা সাহিত্যে স্থান পেতে পারে না যা সুন্দর নয়, শান্তিময় নয়, ভীষণ নয়, মহৎ নয়, যার মধ্যে মানবধর্ম নেই কিংবা যা অভ্যাস বা অন্য কারণে মানবের সঙ্গে নিকটসম্পর্কে বদ্ধ নয় । আমার বোধ হচ্ছে, আমার প্রথম চিঠিতে লেখকেরই নিজত্ব-প্রকাশের উপর এতটা ঝোক দিয়েছিলুম যে সেইটেই সাহিত্যের মূল লক্ষ্য এইরকম বুঝিয়ে গেছে। আমার সেই সামান্য আদিম অপরাধ তুমি কিছুতেই মার্জনা করতে পািরছ না ; তার পরে আমি যে কথাই বলিনা কেন তোমার মন থেকে সেটা আর যাচ্ছে না ; আদম যেমন প্রথম পাপে তীর সমস্ত মানববংশ-সমেত স্বৰ্গচ্যুত হয়েছিলেন তেমনি আমার সেই প্রথম ত্রুটি ধরে আমার সমস্ত সংস্কার ও যুক্তি-পরম্পরাসুদ্ধ আমাকে মতাচ্যুত করবার চেষ্টায় আছ। আমার বলা উচিত ছিল, লেখকের নিজত্ব নয়, মনুষ্যত্ব-প্রকাশই সাহিত্যের উদ্দেশ্য। (আমার মনের মধ্যে নিদেন সেই কথাটাই ছিল) কখনো নিজত্বদ্বারা কখনো পরীত্বদ্বারা । কখনো স্বনামে কখনো বেনামে। কিন্তু একটা মনুষ্য-আকারে। লেখক উপলক্ষ মাত্র, মানুষই উদ্দেশ্য। আমার গোড়াকার চিঠিতে যদি এ কথা প্রকাশ হয়ে না থাকে তা হলে জেনাে সেটা আমার অনিপুণতাবশত। একে তত্ত্ব, সাহিত্যের তত্ত্ব, তাতে আবার আমার মতো লোক তার ব্যাখ্যাকারক ! কথা আছে। একে বোবা, তাতে আবার বোলতায় কামড়েছে- একে গো গীে করা বৈ আর-কিছু জানে না, তার উপরে কামড়ের জ্বালায় গোগানি কেবল বাড়িয়ে তোলে। আমি যে এই আলোচনা করছি, এযেন মানসিক মৃগয়া করছি। একটা জীবন্ত জিনিসের পশ্চাতে দুটােছুটি করে বেড়াচ্ছি; পদে পদে স্থান পরিবর্তন করছি, কখনাে পর্বতের শিখরে, কখনাে পর্বতের গুহায়। এইজন্য আমার সমস্ত আলোচনায় যদিও লক্ষ্যের ঐক্য আছে, কিন্তু হয়তাে পথের অনৈক্য পাবে। কিন্তু সে-সমস্ত মার্জনা করে তুমিও যদি আমার সঙ্গে যোগ দাও, যদি আমার পাশাপাশি ছােট, তা হলে আমার মৃগটি যদি-বা সম্পূর্ণ ধরা না পড়ে নিদেন তোমার দৃষ্টিগোচর হয়। অর্থাৎ আমার প্রার্থনা এই যে, আমি যদি তোমাকে বােঝাতে ভুল করে থাকি তুমি নিজে ঠিকটা বােঝে। অর্থাৎ আমি যদি তোমাকে মাছটা ধরে দিতে না পারি, আমার পুকুরটা ছেড়ে দিচ্ছি, তুমিও জাল ফেলো। কিন্তু কিছু উঠবে কি ? সে কথা বলতে পারিনে— সেতোমার অদৃষ্ট কিংবা আমার অদৃষ্ট যাই বল। কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে আমার একটা নালিশ আছে। তুমি আমারই কথাটাকে কেবল কুঁটি ধরে টেনে টেনে বের করছি ; নিজের কথাটিকে বরাবর বেশ ঢেকেঢুকে সামলে রেখেছি। আমি যেন কেবল একটি জীবন্ত তুলােয়ারের সঙ্গে লড়াই করছি— কেবল খোচা খাচ্ছি, কাউকে খােচা ফিরিয়ে দিতে পারছিনে। আমি বার বার যতই বুক ফুলিয়ে ফুলিয়ে দাঁড়াচ্ছিতোমার ততই আঘাত করবার সুবিধে হচ্ছে। কিন্তু এটাকে কি ন্যায়যুদ্ধ বলে ? আমি ব্ৰাহ্মণ, কেবলমাত্র যুদ্ধের উৎসাহে আনন্দ পাই নে। আসল কথাটা কী তাই জানতে झा’ या अंठ शिष्ठ् ड् श् ष् ड् ढ् ण् ं वळ ? কিন্তু তুমি শুনছি। কলকাতায় আসছি ; আমিও সেখানে যাচ্ছি। তা হলে তৰ্কটা মোকাবিলায় নিম্পত্তি হবার সম্ভাবনা দেখছি। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে মোকাবিলায় নিম্পত্তি কুইনাইন দিয়ে জ্বর ঠেকানোর মতো। হয়তো চট করে ছেড়ে যেতে পারে, নয় তো গুমরে গুমরে থেকে যায়— আবার কিছুদিন বাদে কেঁপে কেঁপে দেখা দেয়। ইতি। ऊ-ठानि »२०