পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় a\99 কালো জল চুপে চুপে বহিল গোপন ছল-ভরা সুগভীর চুরির মতন। দিবালোক চলে গেল দিবসের পিছু। যমুনা উতলা করি না মিলিল কিছু। রঘুনাথ গুরু-কাছে আসিলেন ফিরে । “এখনো উঠাতে পারি' করজোড়ে যাচে, “যদি দেখাইয়া যাও কোনখানে আছে।” গুরু কহিলেন, ‘আছে ওই নদীতলে |’ উভয় পাঠে ছন্দের যে ভিন্নতা সে সম্পর্কে 'মানসীর প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় নিম্নলিখিত অংশ প্ৰণিধানযোগ্য— এই গ্রন্থের অনেকগুলি কবিতায় যুক্তাক্ষরকে দুই অক্ষর-স্বরূপ গণ্য করা হইয়াছে। সেরূপ স্থলে সংস্কৃত ছন্দের নিয়মানুসারে যুক্তাক্ষরকে দীর্ঘ করিয়া না পড়িলে ছন্দ রক্ষা করা অসম্ভব হইবে । যথা নিম্নে যমুনা বহে স্বচ্ছ শীতল ; উধের্ব পাষাণতট, শ্যাম শিলাতল । “নিম্নে ‘স্বচ্ছ এবং উর্ধে এই কয়েকটি শব্দে তিন মাত্রা গণনা না করিলে পয়ার ছন্দ থাকে না। আমার বিশ্বাস, যুক্তাক্ষরকে দুই অক্ষর-স্বরূপ গণনা করাই স্বাভাবিক এবং তাঁহাতে ছন্দের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ; কেবল বাঙ্গালা ছন্দ পাঠ করিয়া বিকৃত অভ্যাস হওয়াতেই সহসা তা দুঃসাধ্য মনে হইতে পারে। শব্দের আরম্ভ-অক্ষর যুক্ত হইলেও তাঁহাকে যুক্তাক্ষর-স্বরূপে গণনা করা যায় নাই- পাঠকেরা এইরূপ আরো দুই-একটি ব্যতিক্রম দেখিতে পাইবেন।-- “তথ্য ও সত্য প্রবন্ধে (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা, ১৯ ফাল্লুন ১৩৩০) রবীন্দ্রনাথ “শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা’ কবিতাটি সম্বন্ধে বলিয়াছেন- A. যারা তথ্যের দিকে দৃষ্টি রাখে তাদের হাতে কবিদের কী দুৰ্গতি ঘটে তার একটা দৃষ্টান্ত দিই। আমি কবিতায় একটি বৌদ্ধকাহিনী লিখেছিলেম । বিষয়টি হচ্ছে এই : একদা প্ৰভাতে অনাথাপিণ্ডদ প্ৰভু বুদ্ধের নামে শ্রাবন্তী নগরের পথে ভিক্ষা মেগে চলেছেন। ধনীরা এনে দিল ধন, শ্ৰেষ্ঠীরা এনে দিল রত্ন, রাজঘরের বধূরা এনে দিলে হীরামুক্তার কণ্ঠী। সব পথে পড়ে রইল, ভিক্ষার বুলিতে উঠল না। বেলা যায়, নগরের বাহিরে পথের ধারে গাছের তলায় অনাথাপিণ্ডদ দেখলেন এক ভিক্ষুক মেয়ে। তার আর কিছুই নেই, গায়ে একখানি জীর্ণ চীর। গাছের আড়ালে দাড়িয়ে এই মেয়ে সেই চীরখানি প্রভুর নামে দান করলে। অনাথাপিণ্ডদ বললেন, অনেকে অনেক দিয়েছে, কিন্তু সব তো কেউ দেয় নি। এতক্ষণে আমার প্রভুর যোগ্য দান মিলল, আমি ଅନ୍ଯା একজন প্রবীণ বিজ্ঞ ধাৰ্মিক খাতিমান লােক এই কবিতা পড়ে বড়ো লজ্জা পেয়েছিলেন : বলেছিলেন, এ তো ছেলেমেয়েদের পড়বার যোগ্য কবিতা নয়। এমনি আমার ভাগ্য, আমার খোড়া কলম খানার মধ্যে পড়তেই আছে। যদি-বা বীেদ্ধধর্মগ্রন্থ থেকে আমার গল্প আহরণ করে