পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԾ)8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আনলুম, সেটাতেও সাহিত্যের আবরু নষ্ট হল ! নীতিনিপুণের চক্ষে তথ্যটাই বড়ো হয়ে উঠল, সত্যটা ঢাকা পড়ে গেল। হায় রে কবি, একে তো ভিখারিনীর কাছ থেকে দান নেওয়াটাই তথ্য হিসাবে অধৰ্ম, তার পরে নিতান্ত নিতেই যদি হয় তা হলে তার পাতার কুঁড়ের ভাঙা বঁপটা কিংবা একমাত্র মাটির হাড়িটা নিলে তো সাহিত্যের স্বাস্থ্যরক্ষা হতে পারত। তথ্যের দিক থেকে এ কথা নতশিরে, মানতেই হবে । এমন-কি, আমার মতো কবিও যদি তথ্যের জগতে ভিক্ষা করতে বেরোত। তবে কখনোই এমন গৰ্হিত কাজ করত না, এবং তথ্যের জগতে পাগলাগারদের বাইরে এমন ভিক্ষুক মেয়ে কোথাও মিলত না রাস্তার ধারে নিজের গায়ের একখানিমাত্র কাপড় যে ভিক্ষা দিত। কিন্তু সত্যের জগতে স্বয়ং ভগবান বুদ্ধের প্রধান শিষ্য এমন ভিক্ষা নিয়েছেন এবং ভিখারিনী এমন অদ্ভুত ভিক্ষা দিয়েছে ; এবং তার পরে সে মেয়ে যে কেমন করে রাস্ত । দিয়ে ঘরে ফিরে যাবে সে তর্ক সেই সত্যের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তথ্যের এতবড়ো অপলাপ ঘটে ও সত্যের কিছুমাত্র খর্বত হয় না- সাহিত্যের ক্ষেত্রটা এমনি । রসবস্তুর এবং তথ্যবস্তুর এক ধর্ম এবং এক মূল্য নয়। তথ্যজগতের যে আলোকরশ্মি দেয়ালে এসে ঠেকে যায় রসজগতে সে রশ্মি স্কুলকে ভেদ করে অনায়াসে পার হয়ে যায়, তাকে মিস্ত্রি ডাকতে বা সিদ্ধ কাটতে হয় না। রসজগতে ভিখারির জীৰ্ণ চীরখানা থেকেও নেই, তার মূল্যও তেমনি লক্ষপতির সমস্ত ঐশ্বর্যের চেয়ে বড়ো । 激波 --সাহিত্যের পথে “গানভঙ্গ’ কবিতার রচনাকাল : ২৪ আষাঢ় ১২৯৯ । সাধনা পত্রে ১২৯৯ চৈত্রে ‘সভাভঙ্গ’ নামে ইহা প্রথম প্রচারিত, ছিন্নপত্রে বা ছিন্নপত্রাবলীতে ৩ জুলাই ১৮৯২ (২০ আষাঢ় ১২৯৯) তারিখের চিঠিতে যে স্বপ্নের উল্লেখ তাহা এই কবি-কল্পনার মূলে— প্রথমাবধি মুদ্রিত ‘১৩০০' : সাল ছাপাের ভুল ছিল সন্দেহ নাই। কল্পনা কল্পনা ১৩০৭ সালের বৈশাখ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর নিকট কল্পনার অনেকগুলি কবিতার পাণ্ডুলিপি দৃষ্ট হইয়াছে। ‘চীেরপঞ্চাশিকা' 'পিয়াসী ও ‘প্রকাশ কবিতার পাঠান্তর উক্ত পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত হইল। চৌরপঞ্চাশিকা বহু বর্ষ হতে তব বিপুল প্রণয় বেদনবিহীন ! দীপ্তশিখাসম তব স্পন্দিত হৃদয় । স্তব্ধ বহুদিন ! ! ওগাে চীের কবি ! বিদ্যা তব কনকচম্পকগীেরছবি মধ্যাহ্নে-খসিয়া-পড়া চম্পকের মতো ধূলিশয্যাগত | বহু বর্ষ শত ! / - বিরহের মিলনের সুতীব্র তাপন চিরসমাপন ।