পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় 480 আপনাকে বিরাপ মূর্তিতে প্রকাশ করিতেছে। ‘মাতাল যাহা বলিতেছে তাহা সম্পূর্ণ সত্য নহে, ਔਸ਼ਕ সমাজসংগত ভব্যতার ধার ধরি না ; বিদ্রোহী প্রেম বলে, আমি ক্ষণকালের খেলমাত্র, আমি চিরস্থায়ী একনিষ্ঠতার ধার ধারি না। একান্ত বেদনাকে স্পর্ধিত অত্যুক্তির মধ্যে গােপন করিয়া রাখিবার এই আড়ম্বর। এই সকল কথার যথার্থ তাৎপর্য গ্ৰহণ করিতে গেলে অনেক সময়ে ইহাদিগকে উল্টা করিয়া বুঝিতে হয়। নৈবেদ্য নৈবেদ্যা ১৩০৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয় কবিতাটির প্রসঙ্গে, বঙ্গভাষার লেখক গ্রন্থে প্রকাশিত, পরে ‘আত্মপরিচয় গ্রন্থে সংকলিত, রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক লিখিত নিম্নমুদ্রিত অংশ উদ্ধারযোগ্য— প্রকৃতি তাহার রূপ-রস-বৰ্ণ-গন্ধ লইয়া, মানুষ তাহার বুদ্ধি-মন তাহার স্নেহ-প্রেম লইয়া আমাকে মুগ্ধ করিয়াছে- সেই মোহকে আমি অবিশ্বাস করি না। সেই মোহকে আমি নিন্দা করি না । তাহা আমাকে বদ্ধ করিতেছে না, তাহা আমাকে মুক্তই করিতেছে ; তাহা আমাকে আমার বাহিরেই ব্যাপ্ত করিতেছে। নীেকার গুণ নীেকাকে বাধিয়া রাখে নাই, নীেকাকে টানিয়া টানিয়া লইয়া চলিয়াছে । জগতের সমস্ত আকর্ষণ-পােশ আমাদিগকে তেমনি অগ্রসর করিতেছে। কেহ-বা দ্রুত চলিতেছে বলিয়া সে আপন গতিসম্বন্ধে সচেতন ; কেহ-বা মন্দগমনে চলিতেছে বলিয়া মনে করিতেছে, বুঝি-বা সে এক জায়গায় বাধাই পড়িয়া আছে। কিন্তু সকলকেই চলিতে হইতেছে, সকলই এই জগৎসংসারের নিরন্তর টানে প্রতিদিনই নৃত্যুনাধিক পরিমাণে আপনার দিক হইতে ব্ৰহ্মের দিকে ব্যাপ্ত হইতেছে । আমরা যেমনই মনে করি, আমাদের ভাই, আমাদের প্ৰিয়, আমাদের পুত্র আমাদিগকে একটি জায়গায় বাধিয়া রাখে নাই। যে জিনিসটাকে সন্ধান করিতেছি দীপালোক কেবলমাত্র সেই জিনিসটাকে প্রকাশ করে তাহা নহে, সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে ; প্ৰেম প্রেমের বিষয়কে অতিক্রম করিয়াও ব্যাপ্ত হয় । জগতের সৌন্দর্যের মধ্য দিয়া, প্রিয়জনের মাধুর্যের মধ্য দিয়া, ভগবানই আমাদিগকে টানিতেছেন- আর-কাহারও টানিবার ক্ষমতাই নাই। পৃথিবীর প্রেমের মধ্য দিয়াই সেই ভূমানন্দের পরিচয় পাওয়া, জগতের এই রূপের মধ্যেই সেই অপরূপকে সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ করা, ইহাকেই তো আমি মুক্তির সাধনা বলি। জগতের মধ্যে আমি মুগ্ধ, সেই মোহেই আমার মুক্তিরসের আস্বাদন। বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয়। অসংখ্যবন্ধন-মাঝে মহানন্দময় লভিব মুক্তির স্বাদ । -আত্মপরিচয় (১৩৫০), পৃঃ ২২-২৩ নৈবেদের অনেকগুলি কবিতা গানরূপে ব্যবহৃত হইবার সময় সেগুলির অনেক । পাঠ-পরিবর্তন হইয়াছে। স্মরণ ১৩০৯ সালে ৭ই আগ্রহায়ণ রবীন্দ্রনাথের সহধর্মিণী দেহত্যাগ করেন। তঁহার স্মৃতির উদ্দেশে রবীন্দ্রনাথ যে কবিতাগুলি রচনা করেন তাহার অধিকাংশই বঙ্গদর্শন (নব পর্যায়) মাসিক । পত্রের ১৩০৯ অগ্রহায়ণ-ফায়ুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পরে সেগুলি মােহিতচন্দ্র সেন সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থাবলীতে (১৩১০) সংকলিত হয়- অধিকাংশ ‘স্মরণ’ বিভাগে, এবং বর্তমান