পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१७8 রবীন্দ্র-রচনাবলী । আসিয়াছেন। তাহার দশমাস কাটিয়া গিয়াছে, আজ সে ভূমিষ্ঠ হইয়াছে। , কবি বলিয়াছেন : শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম। ধর্মসাধনের গোড়াতেই শরীরের প্রয়োজন হয়। সাহিত্যপরিষদের সেই আদ্য প্রয়োজন আজ সম্পূর্ণ হইয়াছে; এখন হইতে তাহার ধর্মসাধনা সবলে সিদ্ধির পথে অগ্রসর হইবে এইরূপ আশা করা যাইতেছে। ইতর জন্তুর অপেক্ষা মানুষের গর্ভবাসকালও দীর্ঘ; তাহার শৈশব অবস্থাও অচির নহে। শ্ৰেষ্ঠতালাভের মূল্যস্বরূপ মানুষকে এই বিলম্ব স্বীকার করিতে হয়। সাহিত্যপরিষৎকেও তাহার বাহ্যশরীর পূর্ণ করিতে বিলম্ব সাধিত হইয়াছে। অনেক দিন ধরিয়া নিজের প্রাণশক্তির পরিচয় দিয়া দেশের লোকের শ্রদ্ধা ও আকাঙক্ষার মধ্যে স্থানলাভ করিয়া। তবে তাহার, এই স্কুলদেহটি আজ প্রকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে। । এই স্বাভাবিক বিলম্বই আমাদের পক্ষে আশার কারণ । ইহা ভোজবাজির খেলার মতো অকস্মাৎ কোনো খামখেয়ালির শ্রদ্ধাহীন টাকার জোরে এক রাত্রে সৃষ্ট হয় নাই। অনেক দিন দেশের হৃৎসঞ্চারিত রক্তের দ্বারা পুষ্ট হইয়া, তাহার জীবন হইতে জীবনলাভ করিয়া, তবেই কিন্তু এখনো আমাদের সম্পূর্ণ নিৰ্ভয় ও নিশ্চিন্ত হইবার সময় আসে নাই। এখনো এ শিশু অনেক দিন জননীর সতর্ক মেহের অপেক্ষা রাখে। তাহার পরে বড়ো হইয়া বলিষ্ঠ হইয়া জননীকে নির্ভর দান করিবে । আদ্যকার উৎসবে এই নবদেহপ্রাপ্ত সাহিত্যপরিষদের মুখ দেখিয়া সমস্ত দেশের স্নেহ ও আশীৰ্বাদ ইহার প্রতি আকৃষ্ট হইবে, এই আমরা আশা করিয়া আছি। যে পর্যন্ত ইহার শৈশবের । দুর্বলতা কিছুমাত্র থাকিবে সে-পর্যন্ত বাঙালি ইহাকে পোষণ করিবে, রক্ষা করিবে, ইহার অভাব দূর করিয়া নিজের অভাবমোচনের পন্থা করিবে, এই অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রত্যাশা লইয়া আজ আমরা আনন্দ করিতে আসিয়াছি। ” তবু মন হইতে ভয় দূর হয় না। কারণ, যাহারা দুৰ্ভাগ্য তাহারা স্বভাব হইতেই ভ্ৰষ্ট হয় | যে পুত্র পূর্ণতা দান করে সকলে তাঁহাকে স্বভাবতই পূর্ণ করিতে চায় ; কেবল ভাগ্যে যাহার দুৰ্গতি আছে সে, আপন ভাবী আশাস্পদকেও অন্নদান করিতে বিমুখ হয় । বাংলাদেশের ঘরেও মাঝে মাঝে দেবলোক হইতে মঙ্গল নানা আকার ধরিয়া অবতীর্ণ হইয়াছে। আমরা তাহার সকলটিকে পালন করি নাই। এমনি করিয়া অনেক নবীন আগন্তুককেই আমরা অনাদরে অভুক্ত রাখিয়া ফিরাইয়া দিয়াছি। সেই সকল অপমানিত মঙ্গলের অভিসম্পাত অনেক জমা হইয়া উঠিয়াছে; তাহারাই আমাদের উন্নতিপথের এক-একটি বড়ো বড়ো বাধা রচনা করিয়া রহিয়াছে। বাংলাদেশের ক্ৰোড়ে আজ যে কল্যাণের কমনীয় শৈশব সাহিত্যপরিষৎরাপে আমাদের দর্শনগোচর হইল, ইহার প্রতি আমাদের চিত্ত প্ৰসন্ন হউক, আনন্দের আনুকূল্য প্রসারিত হউক— বিধাতাপুরুষ এই সভাতলে উপস্থিত থাকিয়া তঁহার অলক্ষ্য লেখনী দিয়া অদ্য এই শিশুর ললাটে যে অদৃশ্যলিপি লিখিতেছেন তাহাতে বাঙালির গীেরব, বাঙালির কীর্তি, বাঙালির চরিতার্থতা কালে কালে সপ্রমাণ হইয়া উঠুক, অন্তরের এই কামনা প্ৰকাশ করিয়া আমি আসন গ্ৰহণ করিতেছি। -°ब्रिरु९°ब्रिष्ट्र (शक्षून »७४७) সাহিত্যের কয়েকটি প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক 'জাতীয় শিক্ষা-পরিষদে পঠিত, ইহা প্রথম প্রকাশ-কালে বঙ্গদর্শন পত্রে বিজ্ঞাপিত ; অপর-একটি সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন শ্ৰদ্ধেয় রবীন্দ্রজীবনীকার ; সেই প্ৰবন্ধ কয়টি- সৌন্দর্যবোধ, বিশ্বসাহিত্য, সৌন্দর্য ও সাহিত্য, সাহিত্যসৃষ্টি। অপিচ দ্রষ্টব্য, সাহিত্য, প্রচলিত তৃতীয় (১৩৬১) ও চতুর্থ (১৩৮৮) সংস্করণ।