পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী সে বছরে ফাঁকা পোনু কিছু টাকা করিয়া দালালগিরি। করিলাম মন শ্ৰীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরি। পরিবার তায় সাথে যেতে চায়, বুঝায়ে বলিনু তারে পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে । লয়ে রাশারশি করি কষাকষি পোটলাপুটলি বাধি বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কহিল কাদি, আমি কহিলাম ‘আরে রাম রাম ! নিবারণ সাথে যাবে ।” রেলগাড়ি ধায় ; হেরিলাম হায় নামিয়া বর্ধমানে স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর কত বা সহিব নিত্য ! যত তারে দুষি তবু হনু খুশি হেরি পুরাতন ভূত্য | নামিনু শ্ৰীধামে, দক্ষিণে বামে পিছনে সমুখে যত লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্ৰাণটা করিল কণ্ঠাগত | জন ছয় সাতে মিলি একসাথে পরমবন্ধুভাবে কোথা ব্ৰজবালা ! কোথা বনমালা ! কোথা বনমালী হরি ! কোথা হা হন্ত, চিরবসন্ত ! আমি বসন্তে মারি | বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ— আমি এক ঘরে, ব্যাধি-খরশরে ভরিল সকল অঙ্গ । ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ, “ কেষ্ট, আয় রে কাছে । এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেশে প্ৰাণ বুঝি নাহি বঁাচে ।” হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক, সে যেন পরম বিত্ত । নিশিদিন ধরে দাড়ায়ে শিয়রে মোর পুরাতন ভূত্য । মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল, শিরে দেয় মোর হাত ; দাড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই তার ভাত । বলে বার বার, ‘কর্তা, তোমার কোনো ভয় নাই, শুন, যাবে দেশে ফিরে, মাঠাকুরানীরে দেখিতে পাইবে পুন৷ ” লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম ; তাহারে ধরিল জ্বরে— নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ-’পরে | হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন, বন্ধ হইল নাড়ীএতবার তারে গেনু ছাড়াবারে, এতদিনে গেল ছাড়ি | বহুদিন পরে আপনার ঘরে ফিরিনু সারিয়া তীর্থআজ সাথে নেই চিরসাথি সেই মোর পুরাতন ভূত্য | [শিলাইদহ ] ১২ ফালুন ১৩০১