পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী দুই বিঘা জমি শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভূঁই আর সবই গেছে। ঋণে । বাবু বলিলেন, “বুঝেছি। উপেন, এ জমি লইব কিনে ৷” কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই । চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাই ।” শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি। বাগানখানা, পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা— ওটা দিতে হবে।” কহিলাম। তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি সজল চক্ষে, “করুন। রক্ষে গরিবের ভিটেখানি । সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া, দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া !” আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে, কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।” পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে— করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খাতে । এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভুরিরাজার হস্ত করে সমস্ত কঙালের ধন চুরি । মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে, তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে | সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্ৰমি তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি। নে সেই দুই বিঘা জমি । হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো-ষোলোএকদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল । নমো নমো নাম সুন্দরী মম। জননী বঙ্গভূমি ! গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি । ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটাে ছোটাে গ্রামগুলি । পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ, স্তব্ধ অতল দিঘি, কালোজল— নিশীথশীতল স্নেহ । বুকভরা মধু বঙ্গের বধু জল, লয়ে যায় ঘরেমা বলিতে প্ৰাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে । দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশি নু নিজগ্রামে— কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রাথতলা করি বামে, তৃষাতুর শেষে পহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে । bra