পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. পুরবী যারা আমার সাব-সকালের গানের দ্বীপে জালিয়ে দিলে আলে। আপন হিয়ার পরশ দিয়ে ; এই জীবনের সকল সাদা কালো যাদের আলো-ছায়ার লীলা ; সেই যে আমার আপন মাতুষগুলি নিজের প্রাণের স্রোতের পরে আমার প্রাণের ঝরনা নিল তুলি ; তাদের সাথে একটি ধারায় মিলিয়ে চলে, সেই তো আমার আয়ু, নাই সে কেবল দিন-গণনার পাজির পাতায়, নয় সে নিশাস-বায়ু । তাদের বাচায় আমার বাচ আপন সীমা ছাড়ায় বহু দূরে ; নিমেষগুলির ফল পেকে যায় নানা দিনের স্বধার রসে পুরে ; অতীত কালের অনিন্দরূপ বর্তমানের বৃস্ত-দোলায় দোলে,— গর্ত হতে মুক্ত শিশু তবুও যেন মায়ের বক্ষে কোলে বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের বাধন দিয়ে । তাই তো যখন শেষে একে একে আপন জনে স্বৰ্য-অ (লোর অস্তরালের দেশে জাখির নাগাল এড়িয়ে পালায়, তখন রিক্ত শীর্ণ জীবন মম শুষ্ক রেখায় মিলিয়ে আসে বর্ষাশেষের নিঝরিণী সম শূন্ত বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্ত বারি অন্ত অবহেলায় । তাই যারা আজ রইল পাশে এই জীবনের অপরাহ্লবেলায় তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলে,— বলে নে ভাই, “এই যা দেখা, এই যা ছোওয়া, এই ভালো এই ভালে । এই ভালো আজ এ সংগমে কান্নাহালির গঙ্গা-যমুনায় । ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায় । এই ভালো রে প্রাণের রঙ্গে এই আসঙ্গ সকল অঙ্গে মনে পুণ্য ধরার ধুলো মাটি ফল হাওয়া জল তৃণ তরুর সনে । এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জাগ, গান গাওয়া এই ভাষায়, তারার সাথে নিশীথ রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন প্রাতের আশায়।”