পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীশ্র-রচনাবলী چ ه چ. অভিজিং। বুঝলুম, যখন শোনা গেল মুক্তধারায় ওরা বাধ বেঁধেছে। সঞ্জয় । তোমার এ কথার অর্থ আমি পাই নে। - অভিজিৎ । মাহুষের ভিতরকার রহন্ত বিধাতা বাইরের কোথাও নাকোথাও লিখে রেখে দেন ; আমার অন্তরের কথা আছে ওই মুক্তধারার মধ্যে। তারই পায়ে ওরা যখন লোহার বেড়ি পরিয়ে দিলে তখন হঠাৎ যেন চমক ভেঙে বুঝতে পারলুম উত্তরকুটের সিংহাসনই আমার জীবন-শ্রোতের বাধ। পথে বেরিয়েছি তারই পথ খুলে দেবার জন্তে । সঞ্জয় । যুবরাজ, আমাকেও তোমার সঙ্গী করে নাও । অভিজিৎ । না ভাই, নিজের পথ তোমাকে খুজে বের করতে হবে। আমার পিছনে যদি চল তাহলে আমিই তোমার পথকে আড়াল করব। 翻 সঞ্জয় । তুমি অত কঠোর হয়ে না, আমাকে বাজছে । অভিজিং। তুমি আমার হদয় জান, সেইজন্তে আঘাত পেয়েও তুমি আমাকে বুঝবে। ** সঞ্জয় । কোথায় তোমার ডাক পড়েছে তুমি চলেছ, তা নিয়ে আমি প্রশ্ন করতে চাই নে। কিন্তু যুবরাজ, এই যে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, রাজবাড়িতে ওই যে বন্দীরা দিনাবসানের গান ধরলে, এরও কি কোনো ডাক নেই ? যা কঠিন তার গৌরব থাকতে পারে, কিন্তু যা মধুর তারও মূল্য আছে। অভিজিং। ভাই, তারই মূল্য দেবার জন্যেই কঠিনের সাধনা। সঞ্জয় । সকালে যে আসনে তুমি পূজায় বস, মনে আছে তো সেদিন তার সামনে একটি শ্বেত পদ্ম দেখে তুমি অবাক হয়েছিলে ? তুমি জাগবার আগেই কোন ভোরে ওই পদ্মটি লুকিয়ে কে তুলে এনেছে, জানতে দেয় নি সে কে—কিন্তু এইটুকুর মধ্যে কত স্বধাই আছে সে কথা কি আজ মনে করবার নেই ? সেই ভীরু, ষে আপনাকে গোপন করেছে,কিন্তু আপনার পূজাগোপন করতে পারে নি, তার মুখ তোমার মনে পড়ছে না ? অভিজিৎ । পড়ছে বই কি । সেইজন্যেই সইতে পারছি নে ওই বীভৎসটাকে ষা এই ধরণীর সংগীত রোধ করে দিয়ে আকাশে লোহার দাত মেলে অট্টহাস্ত করছে। স্বৰ্গকে ভালো লেগেছে বলেই দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে যেতে দ্বিধা করি নে । সঞ্জয়। গোধূলির আলোটি ওই নীল পাহাড়ের উপরে মূৰ্ছিত হয়ে রয়েছে এর মধ্যে দিয়ে একটা কান্নার স্মৃতি তোমার হৃদয়ে এসে পৌছচ্ছে না ? অভিজিৎ । ই পৌছচ্ছে। আমারও ৰুক কান্নায় ভরে রয়েছে। আমি কঠোরতার অভিমান রাখি নে –চেয়ে দেখে ওই পাখি দেবদারু-গাছের চূড়ার ডালটির উপর একল বসে আছে ; ও কি নীড়ে যাবে, না, অন্ধকারের ভিতর দিয়ে দূর প্রবাসের অরণ্যে