পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै● ० ब्रयौड-ब्रछनांवलौ মন্ত্ৰ লইতে আসিত। কেহ রোগের ঔষধ জানিতে আসিত। মেয়ের ঘাটে জাসিয়া বলাবলি করিত—আহা কী রূপ! মনে হয় যেন মহাদেব সশরীরে তাহার মন্দিরে আসিয়া অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। যখন সন্ন্যাসী প্রতিদিন প্রত্যুষে সূর্যোদয়ের পূর্বে শুকতারাকে সম্মুখে রাখিয়া গঙ্গার জলে নিমগ্ন হইয়া ধীরগম্ভীরস্বরে সন্ধ্যাবন্দনা করিতেন, তখন আমি জলের কল্লোল শুনিতে পাইতাম না। র্তাহার সেই কণ্ঠস্বর শুনিতে শুনিতে প্রতিদিন গঙ্গার পূর্ব উপকূলের আকাশ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিত, মেঘের ধারে ধারে অরুণ রঙের রেখা পড়িত, অন্ধকার যেন বিকাশোম্মুখ কুঁড়ির আবরণ-পুটের মতো ফাটিয়া চারিদিকে নামিয়া পড়িত ও আকাশ-সরোবরে উষাকুস্কমের লাল আভা অল্প অল্প করিয়া বাহির হইয়া আসিত। আমার মনে হইত যে, এই মহাপুরুষ গঙ্গার জলে দাড়াইয়া পূর্বের দিকে চাহিয়া যে এক মহামন্ত্র পাঠ করেন তাহারই এক-একটি শব্দ উচ্চারিত হইতে থাকে আর নিশীথিনীর কুহক ভাঙিয়া যায়, চন্দ্র-তারা পশ্চিমে নামিয়া পড়ে, হুর্ব পূর্বকাশে উঠিতে থাকে, জগতের দৃষ্ঠপট পরিবর্তিত হইয়া যায়। এ কে মায়াবী। স্নান করিয়া যখন সন্ন্যাসী হোমশিখার স্তায় তাহার দীর্ঘ শুভ্ৰ পুণ্যতন্তু লইয়া জল হইতে উঠিতেন, তাহার জটাজুট হইতে জল বরিয়া পড়িত, তখন নবীন সূর্যকিরণ র্তাহার সর্বাঙ্গে পড়িয়া প্রতিফলিত হইতে থাকিত । এমন আরও কয়েক মাস কাটিয়া গেল । চৈত্র মাসে সূর্যগ্রহণের সময় বিস্তর লোক গঙ্গাস্বানে আসিল। বাবলাতলায় মস্ত হাট বসিল । এই উপলক্ষে সন্ন্যাসীকে দেখিবার জন্যও লোকসমাগম হইল। যে গ্রামে কুসুমের শ্বশুরবাড়ি সেখান হইতেও অনেকএগুলি মেয়ে আসিয়াছিল। o সকালে আমার ধাপে বসিয়া সন্ন্যাসী জপ করিতেছিলেন, তাহাকে দেখিয়াই সহস। একজন মেয়ে আর-এক জনের গা টিপিয়া বলিয়া উঠিল, “ওলো, এ যে আমাদের কুস্কমের স্বামী ।” আর-একজন দুই আঙলে ঘোমটা কিছু ফাক করিয়া ধরিয়া বলিয়া উঠিল, "ওম, তাইতে গা, এ যে আমাদের চাটুজ্যেদের বাড়ির ছোটোদাদাবাৰু।” আর একজন ঘোমটার বড়ো ঘটা করিত না, সে কহিল, ”আহ, তেমনি কপাল, তেমনি নাক, তেমনি চোখ ।” আর-একজন সন্ন্যাসীর দিকে মনোযোগ না করিয়া নিশ্বাস ফেলিয়। কলসী দিয়া জল ঠেলিয়া বলিল, “আহ। সে কি আর আছে। সে কি জার আসবে। কুস্কমের কি তেমনি কপাল ।”