পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

穹爾@踐 १९S তখন কেহ কহিল, “তার এত দাড়ি ছিল না।” কেহ বলিল, “সে এমন একহারা ছিল না।” কেহ কহিল, “সে যেন এতটা লম্বা নয়।” এইরূপে এ-কথাটার একরূপ নিম্পত্তি হইয়া গেল, আর উঠিতে পাইল না। গ্রামের আর সকলেই সন্ন্যাসীকে দেখিয়াছিল, কেবল কুস্কম দেখে নাই। অধিক লোকসমাগম হওয়াতে কুস্কম আমার কাছে আসা একেবারে পরিত্যাগ করিয়াছিল। একদিন সন্ধ্যাবেল পূর্ণিমা তিথিতে চাদ উঠিতে দেখিয়া বুঝি আমাদের পুরাতন সম্বন্ধ তাহার মনে পড়িল । তখন ঘাটে আর কেহ লোক ছিল না। বিবি পোকা কি কি করিতেছিল। মন্দিরের র্কাসর ঘণ্টা বাজা এই কিছুক্ষণ হইল শেষ হইয়া গেল, তাহার শেষ শৰতরঙ্গ ক্ষীণতর হইয়া পরপারের ছায়াময় বনশ্রেণীর মধ্যে ছায়ার মতো মিলাইয়া গেছে । পরিপূর্ণ জ্যোংস্কা। জোয়ারের জল ছল ছল করিতেছে। আমার উপরে ছায়াটি ফেলিয়া কুসুম বসিয়া আছে। বাতাস বড়ো ছিল না, গাছপালা নিস্তব্ধ। কুস্কমের সন্মুখে গঙ্গার বক্ষে অবারিত প্রসারিত জ্যোংস্কা–কুস্কমের পশ্চাতে আশে পাশে ঝোপে কাপে গাছে পালায়, মন্দিরের ছায়ায়, ভাঙা ঘরের ভিত্তিতে, পুষ্করিণীর ধারে, তালবনে অন্ধকার গা ঢাকা দিয়া মুখে মুড়ি দিয়া বসিয়া আছে। ছাতিম গাছের শাখায় বাদুড় ঝুলিতেছে। মন্দিরের চূড়ায় বসিয়া পেচক কাদিয়া উঠিতেছে। লোকালয়ের কাছে শৃগালের উধ্বচীংকার ধ্বনি উঠিল ও থামিয়া গেল । সন্ন্যাসী ধীরে ধীরে মন্দিরের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন । ঘাটে আসিয়া দুই-এক সোপান নামিয়া একাকিনী রমণীকে দেখিয়া ফিরিয়া যাইবেন মনে করিতেছেন—এমন সময়ে সহসা কুস্কম মুখ তুলিয়া পশ্চাতে চাহিয়া দেখিল । তাহার মাথার উপর হইতে কাপড় পড়িয়া গেল । উধ্বমুখ ফুটন্ত ফুলের উপরে যেমন জ্যোংস্কা পড়ে, মুখ তুলিতেই কুস্কমের মুখের উপর তেমনি জ্যোংক্ষা পড়িল । সেই মুহূর্তেই উভয়ের দেখা হইল। যেন চেনাশোনা হইল। মনে হইল যেন পূর্বজন্মের श्रंबिध्ध्र झ्लि । মাথার উপর দিয়া পেচক ভাকিয়া চলিয়া গেল। শব্দে সচকিত হইয়া আত্মসংবরণ করিয়া কুহুম মাথার কাপড় তুলিয়া দিল। উঠিয়া সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে লুটাইয় প্রণাম করিল। সন্ন্যাসী আশীর্বাদ করিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী ” কুসুম কহিল, “আমার নাম কুস্কম।”