পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१68 রবীন্দ্র-রচনাবলী কুস্কমের কথা শেষ হইলে সন্ন্যাসী বলিলেন, “যাহাকে স্বপ্ন দেখিয়াছ সে কে বলিতে হইবে।” কুসুম জোড়হাতে কহিল, “তাহ বলিতে পারিব না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “তোমার মঙ্গলের জন্য জিজ্ঞাসা করিতেছি, সে কে স্পষ্ট করিয়া বলে ।” কুষম সবলে নিজের কোমল হাত দুটি পীড়ন করিয়া হাতজোড় করিয়া বলিল, *নিতান্ত সে কি বলিতেই হইবে।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “ই বলিতেই হইবে।” কুসুম তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল, “প্ৰভু, সে তুমি।” যেমনি তাহার নিজের কথা নিজের কানে গিয়া পৌছিল, অমনি সে মূৰ্ছিত হইয়া আমার কঠিন কোলে পড়িয়া গেল। সন্ন্যাসী প্রস্তরের মূর্তির মতো দাড়াইয়া রহিলেন । যখন মূছ ভাঙিয়া কুস্কম উঠিয়া বসিল, তখন সন্ন্যাসী ধীরে ধীরে কহিলেন, “তুমি আমার সকল কথাই পালন করিয়াছ ; আর একটি কথা বলিব পালন করিতে হইবে। আমি আজই এখান হইতে চলিলাম, আমার সঙ্গে তোমার দেখা না হয়। আমাকে তোমার ভুলিতে হইবে বলে এই সাধনা করিবে।” কুস্কম উঠিয়া দাড়াইয়া সন্ন্যাসীর মুখের পানে চাহিয়া ধীর স্বরে কহিল, “প্ৰভু, তাহাই হইবে।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “তবে আমি চলিলাম।” কুসুম আর কিছু না বলিয়। র্তাহাকে প্রণাম করিল, তাহার পায়ের ধুলা মাথায় তুলিয়া লইল। সন্ন্যাসী চলিয়া গেলেন। কুকুম কহিল, “তিনি আদেশ করিয়া গিয়াছেন তাহাকে ভুলিতে হইবে।” বলিয়া ধীরে ধীরে গঙ্গার জলে নামিল । এতটুকু বেলা হইতে সে এই জলের ধারে কাটাইয়াছে, শ্রাপ্তির সময় এ জল যদি হাত বাড়াইয়া তাহাকে কোলে করিয়া না লইবে, তবে আর কে লইবে । চাদ অন্ত গেল, রাত্রি ঘোর অন্ধকার হইল। জলের শব্দ শুনিতে পাইলাম, আর কিছু বুঝিতে পারিলাম না। অন্ধকারে বাতাস হুহু করিতে লাগিল; পাছে তিলমাত্র কিছু দেখা যায় বলিয়া সে যেন ফু দিয়া আকাশের তারা গুলিকে নিবাইয়া দিতে চায় । আমার কোলে যে খেলা করিত সে আজ তাহার খেলা সমাপন করিয়া আমার কোল হইতে কোথায় সরিয়া গেল, জানিতে পারিলাম না । কাতিক, ১২৯১ ~ : . .