পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ३९s१ করিয়া ডাকিয়া উঠিতে লাগিল । রাজা আসিয়া সিংহাসনে বলিয়াছেন। পাৰমিত্র সভাসদগণ আসিয়াছেন। রাজকুমারগণ ধন্থর্বাণ হন্তে আসিয়াছেন। নিশান লইয়া নিশানধারী আসিয়াছে। ভাট আসিয়াছে । সৈন্তগণ পশ্চাতে কাতার দিয়া দাড়াইয়াছে। বাজনদারগণ মাথা নাড়াইয়া নাচিয়। সবলে পরমোৎসাহে ঢোল পিটাইতেছে। মহা ধুম পড়িয়া গিয়াছে। পরীক্ষার সময় যখন হইল, ইশা খাঁ রাজকুমারগণকে প্রস্তুত হইতে কহিলেন। ইন্দ্রকুমার যুবরাজকে কহিলেন, "দাদা, আজ তোমাকে জিতিতে হইবে, তাহা না হইলে চলিবে না।” যুবরাজ হাসিয়া বলিলেন, "চলিবে না তে কী। আমার একটা ক্ষুদ্র তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হইলেও জগং সংসার যেমন চলিতেছিল তেমনি চলিবে । আর যদিই বা না চলিত, তবু আমার জিতিবার কোনো সম্ভাবনা দেখিতেছি না।” ইন্দ্রকুমার বলিলেন, "দাদা, তুমি যদি হার তো আমিও ইচ্ছাপূর্বক লক্ষ্যভ্রষ্ট झहे६ ।” যুবরাজ ইন্দ্রকুমারের হাত ধরিয়া কহিলেন, “না ভাই, ছেলেমামুধি করিয়ো ন+– ওস্তাদের নাম রক্ষা করিতে হইবে।” রাজধর বিবর্ণ শুষ্ক চিন্তাকুল মুখে চুপ করিয়া দাড়াইয়া রছিলেন। ইশা খা আসিয়া কহিলেন, “যুবরাজ, সময় হইয়াছে, ধনুক গ্রহণ করে।” যুবরাজ দেবতার নাম করিয়া ধন্থক গ্রহণ করিলেন। প্রায় দুইশত হাত দূরে গোটাপাচ-ছয় কলাগাছের গুড়ি একত্র বাধিয়া স্থাপিত হইয়াছে। মাঝে একটা কচুর পাতা চোখের মতো করিয়া বসানো আছে। তাহার ঠিক মাঝখানে চোখের তারার মতো আকারে কালো চিহ্ন অঙ্কিত। সেই চিহ্নই লক্ষ্যস্থল। দশকের অর্ধচক্র আকারে মাঠ ঘেরিয়া দাড়াইয়া আছে—যেদিকে লক্ষ্য স্থাপিত, সেদিকে যাওয়া নিষেধ । যুবরাজ ধন্থকে বাণ যোজনা করিলেন। লক্ষ্য স্থির করিলেন। বাণ নিক্ষেপ করিলেন। বাণ লক্ষ্যের উপর দিয়া চলিয়া গেল। ইশা খাঁ তাহার গোফযুদ্ধ দাড়িমৃদ্ধ মুখ বিকৃত করিলেন—পাকা ভুরু কুঞ্চিত করিলেন । কিন্তু কিছু বলিলেন না। ইন্দ্রকুমার বিষণ্ণ হইয়া এমন ভাব ধারণ করিলেন, যেন তাহাকেই লজ্জিত করিবার জন্য দাদা ইচ্ছা করিয়া এই কীর্তিটি করিলেন। অস্থিরভাবে ধনুক নাড়িতে নাড়িতে ইশা খাকে বলিলেন, "দাদা মন দিলেই সমস্ত পারেন, কিন্তু কিছুতেই মন দেন না।” ইশা খ বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “তোমার দাদার বুদ্ধি আর-সকল জায়গাতেই খেলে, কেবল তীরের আগায় খেলে না, তার কারণ, বুদ্ধি তেমন স্বল্প নয়।” ইন্দ্রকুমার ভারি চটিয়া একটা উত্তর দিতে যাইতেছিলেন। ইশা খাঁ বুঝিতে পারিয়া