পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ఇ3t ব্ৰহ্ম, নিজেকে কেমন করে বলছেন ? নিজের ক্রিয়ার দ্বারা অনন্ত আকাশকে আলোকে ও আকারে পরিপূর্ণ করে স্পদিত করে ঝংকৃত করে তিনি বলছেন— আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি—তিনি কর্মের মধ্যেই আপন আনন্দবাণী বলছেন, আপন অমৃতসংগীত বলছেন । তার সেই আনন্দ এবং তার কর্ম একেবারে একাকার হয়ে দ্ব্যলোকে ভূলোকে বিকীর্ণ হয়ে পড়েছে । ব্ৰহ্মবাদীও যখন ব্রহ্মকে বলবেন তখন আর কেমন করে বলবেন ? তাকে কর্মের দ্বারাই বলতে হবে । তাকে ক্রিয়াবান হতে হবে। সে কর্ম কেমন কর্ম ? না, যে কৰ্মদ্বারা প্রকাশ পায় তিনি “আত্মক্রীড় আত্মরতিঃ” পরমাত্মায় তার ক্রীড়া, পরমাত্মায় তার আনন্দ । যে কর্মে প্রকাশ পায় তার জানন্দ নিজের স্বার্থসাধনে নয়, নিজের গৌরব বিস্তারে নয় । তিনি যে "নাতিবাদী”—তিনি পরমাত্মাকে ছাড়া নিজের কর্মে আর কাউকেই প্রকাশ করতে চান না। তাই সেই "ব্রহ্মবিদাং বরিষ্ঠঃ” র্তার জীবনের প্রত্যেক কাজে নানা ভাষায় নানা রূপে এই সংগীত ধ্বনিত করে তুলছেন–শাস্তম্ শিবমদ্বৈতম। জগংক্রিয়ার সঙ্গে তার জীবনক্রিয়া এক ছন্দে এক রাগিণীতে গান করছে । | ழ் অস্তরের মধ্যে যা আত্মক্রীড়া, যা পরমাত্মার সঙ্গে ক্রীড়া, বাহিরে সেইটিই যে জীবনের কর্ম ( অস্তরের সেই আনন্দ বাহিরের সেই কর্মে উচ্ছসিত হচ্ছে, বাহিরের সেই কর্ম অস্তরের সেই আনন্দে আবার ফিরে ফিরে যাচ্ছে । এমনি করে অস্তরে বাহিরে আনন্দ ও কর্মের অপূর্ব স্বন্দর আবর্তন চলছে এবং সেই আবর্তনবেগে নব নব মঙ্গললোকের স্বষ্টি হচ্ছে । সেই আবর্তমবেগে জ্যোতি উদ্দীপ্ত হচ্ছে, প্রেম উৎসারিত হয়ে উঠছে । এমনি করে, যিনি চরাচর নিখিলে প্রাণরূপে অর্থাৎ একইকালে আনন্দ ও কর্মরূপে প্রকাশমান সেই প্রাণকে ব্রহ্মবিং আপনার প্রাণের দ্বারাই প্রকাশ করেন । " সেইজন্তে আমার প্রার্থনা এই যে, হে প্রাণস্বরূপ, আমার সেতারের তারে ধেন মরচে না পড়ে, যেন খুলে না জমে—বিশ্বপ্রাণের স্পন্দনাভিঘাতে সে দিনরাত বাজতে থাকুক—কর্ম সংগীতে বাজতে থাকুক—তোমারই নামে বাজতে থাকুক। প্রবল আঘাতে মাঝে মাঝে যদি তার ছিড়ে যায় তো সেও ভালো কিন্তু শিথিল না হয়, মলিন না হয়, ব্যর্থ না হয় । ক্রমেই তার স্বর প্রবল হক, গভীর হক, সমস্ত অস্পষ্টত পরিহার করে সত্য হয়ে উঠুক—প্রকৃতির মধ্যে ব্যাপ্ত এবং মানবাত্মার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হ’ক— হে অাবি তোমার আবির্ভাবের দ্বারা সে ধন্ত হ’ক । , ২৯ পৌষ $8|२०