পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাভিজিকেতন । ●●。 বিষয়ে, ইচ্ছার লক্ষ্য তেমনি ভিতরের অভিপ্রায়ে । উদ্দেশ্য জিনিসটা অস্তরের জিনিস । ইচ্ছা আমাদের বাসনাকে বাইয়ের পথে যেমন-তেমন করে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে মেয় না— সমস্ত চঞ্চল বাসনাকে লে একটা কোনো জান্তরিক উদ্দেশ্নের চারিদিকে বেঁধে ফেলে। তখন কী হয় ? না, যে-সকল বালন নানা প্রভূর জাহানে বাইরে ফিরত, তারা এক প্রভুর শাসনে ভিতরে স্থির হয়ে বসে। অনেক থেকে একের দিকে আলে। টাকা করতে হবে এই উদ্দেশু যদি মনের ভিতরে রাখি তাহলে আমাদের বাসনাকে যেমন-তেমন করে ঘুরে বেড়াতে দিলে চলে না। অনেক লোভ সংবরণ করতে হয়, অনেক জারামের আকর্ষণকে বিসর্জন দিতে হয়, কোনো বাহ বিষয় যাতে আমাদের বাসনাকে এই উদ্বেপ্তের আনুগত্য থেকে ভুলিয়ে না নিতে পারে সে-জন্তে সর্বদাই সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু বাসনাই যদি আমাদের ইচ্ছার চেয়ে প্রবল হয় সে যদি উদ্দেপ্তকে না মানতে চায়, তাহলেই বাহিরের কতৃত্ব বড়ো হয়ে ভিতরের কর্তৃত্বকে খাটো করে দেয় এবং উদ্দেশু নষ্ট হয়ে যায়। তখন মাছুষের স্বষ্টিকার্য চলে না। বাসনা যখন তার ভিতরের কুল পরিত্যাগ করে তখন সে সমস্ত ছারখার করে দেয় । যেখানে ইচ্ছাশক্তি বলিষ্ঠ, কর্তৃত্ব যেখানে অস্তরে স্বপ্রতিষ্ঠিত, সেখানে তামসিকতার আকর্ষণ এড়িয়ে মানুষ রাজসিকতার উৎকর্ষ লাভ করে। সেইখানে বিদ্যায় ঐশ্বর্ষে প্রতাপে মানুষ ক্রমশই বিস্তার প্রাপ্ত হয় । =* কিন্তু বাসনার বিষয় যেমন বহির্জগতে বিচিত্র তেমনি ইচ্ছার বিষয়ও তো অন্তর্জগতে একটি অধিটি নয়। কত অভিপ্রায় মনে জাগে তার ঠিক নেই। বিস্কার অভিপ্রায়, ধনের অভিপ্রায়, খ্যাতির অভিপ্রায় প্রভৃতি সকলেই স্ব স্ব প্রধান হয়ে উঠতে চায় । সেই ইচ্ছার অরাজক বিক্ষিপ্ততাও বাসনার বিক্ষিপ্ততার চেয়ে তো কম নয়। তা ছাড়া অার একটা জিনিস দেখতে পাই । যখন বাসনার অনুগামী হয়ে বাহিরের সহস্র রাজাকে প্রভু করেছিলুম তখন ষে-বেতন মিলত তাতে তো পেট ভরত না । সেইজন্যেই মানুষ বারংবার জাক্ষেপ করে বলেছে বাসনার চাকরি বড়ো দুঃখের চাকরি। এতে যে খাদ্য পাই তাতে ক্ষুধা কেবল বাড়িয়ে তোলে এবং সহস্রের টানে ঘুরিয়ে মেরে কোনো জায়গায় শান্তি পেতে য়ে না। i আবার ইচ্ছার অনুগত হয়ে ভিতরের এক-একটি অভিপ্রায়ের পশ্চাতে যখন বেড়াই তখনও তো অনেক সময়ে মেকি টাকায় বেউন মেলে। শান্তি আসে, অবসাদ আগে, দ্বিধা আসে। কেবলই উত্তেজনাব মনিৰ্বার প্রয়োজন হয়—শান্তিরও অভাব ঘটে। বাসনা যেমন বাহিরের বন্ধায় ঘোরায়, ইচ্ছা তেমনি ভিতরের ধায় ঘুরিয়ে মারে, এবং শেষকালে মজুরি দেবার বেলায় কৰি দিয়ে সারে। . . . . .