পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOWee o রবীন্দ্র-রচনাবলী i ফিরে যেতে চায়। তবু কলম্বলের নিষ্ঠ বাইরে থেকে কোনো নিশ্চয় চিহ্ন না দেখতে পেয়েও নিঃশৰে চলতে থাকে। কিন্তু এমন হয়ে এসেছে নাবিকদের আর ঠেকিয়ে রাখা যায় না, তারা জাহাজ ফেরায় বা! এমন সময় চিহ্ন দেখা দিল, তীর যে আছে তার আর কোনো সন্দেহ রইল না। তখন সকলেই আনন্দিত, সকলেই উৎসাহে এগিয়ে যেতে চায়। তখন কলম্বসকে সকলেই বন্ধু জ্ঞাস করে, সকলেই তাকে ধন্যবাদ দেয় | সাধনার প্রথমাবস্থায় সহায় কেউ নেই—সকলেই সন্দেহ প্রকাশ করে, সকলেই বাধ৷ দেয় । বাইরেও এমন কোনো স্পষ্ট চিহ্ন দেখতে পাই নে যাকে আমরা সত্যবিশ্বাসের স্পষ্ট প্রমাণ বলে নিজের ও সকলের কাছে ধরে দেখাতে পারি। তখন সেই সমূদ্রের মাঝখানে সন্দেহ ও বিরুদ্ধতার মধ্যে নিষ্ঠ যেন এক মুহূর্ত সঙ্গ ত্যাগ না করে। যখন তীর কাছে আসবে, যখন তীরের পাখি তোমার মাস্তলের উপর উড়ে বসবে, যখন তীরের ফুল সমুদ্রের তরঙ্গের উপর নৃত্য করবে তখন সাধুবাদ ও আহুকূল্যের অভাব থাকবে না ; কিন্তু ততকাল প্রতিদিনই কেবল নিষ্ঠ–নৈরাশুজয়ী নিষ্ঠ, আঘাতসহিষ্ণু নিষ্ঠ, বাহিরের উৎসাহ-নিরপেক্ষ নিষ্ঠ, নিন্দায় অবিচলিত নিষ্ঠা—কোনো মতে কোনো কারণেই সেই নিষ্ঠা যেন ত্যাগ না করে। সে যেন কম্পাসের দিকে চেয়েই থাকে, সে যেন হাল অঁাকড়ে বসেই থাকে। »१ कोंसुन বিমুখত সেই বিশ্বকৰ্ম মহাত্মা যিনি জনগণের হৃদয়ের মধ্যে সন্নিবিষ্ট হয়ে কাজ করছেন— তিনি বড়ো প্রচ্ছন্ন হয়েই কাজ করেন। তার কাজ অগ্রসর হচ্ছেই সন্দেহ নেই—কেবল সে কাজ যে চলছে তা আমরা জানি নে বলেই নিরানন্দ আছে। সেই কাজে আমাদের যেটুকু যোগ দেবার আছে তা দিই নি বলেই আমাদের জীবন যেন তাৎপর্যহীন হয়ে রয়েছে। কিন্তু তবু বিশ্বকর্ম তার স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়ার জানন্দে প্রতিদিনই প্রতি মুহূর্তেই কাজ করছেন। তিনি আমার জীবনের একটি স্বৰ্ধকরোজল দিনকে চন্দ্ৰতারাখচিত রাত্রির সঙ্গে গাখছেন, আবার সেই জ্যোতিষ্কপুঞ্জখচিত রাত্রিকে জ্যোতির্ময় আর একটি দিনের সঙ্গে গেঁথে চলেছেন। আমার এই জীবনের মণিহার রচনায় তার বড়ো আনন্দ । আমি যদি তার সঙ্গে যোগ দিতুম তবে সেই আনন্দ আমারও হত। এই আশ্চর্য শিল্পরচনায় কত ছিজ করতে হচ্ছে, কত বিদ্ধ করতে হচ্ছে, কত দগ্ধ করতে