পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রহ্মবিহার বলে। সে প্রতি সামান্ত প্রতি নয়—ম তার একটিমাত্র পুত্রকে যেরকম ভালোবাসেন সেইরকম ভালোবাসা । த ত্রন্ধের অপরিমিত মানল যে বিশ্বের সর্বত্রই রয়েছে, একপুত্রের প্রতি মাতার যে প্রেম সেই প্রেম যে র্তার সর্বত্র। র্তারই সেই মানসের সঙ্গে মানস, প্রেমের সঙ্গে প্রেম না মেশালে সে তো ব্রহ্মবিহার হল না । কথাটা খুব বড়ো। কিন্তু বড়ো কথাই ধে হচ্ছে । বড়ো কথাকে ছোটো কথা করে তো লাভ নেই। ব্রহ্মকে চাওয়াই যে সকলের চেয়ে বড়োকে চাওয়া। উপনিষৎ বলেছেন ভূমাত্বেব বিজিজ্ঞাসিতব্য । ভূমাকেই—সকলের চেয়ে বড়োকেই—জানতে চাইবে । সেই চাওয়া সেই পাওয়ার রূপটা কী সে তো স্পষ্ট করে পরিষ্কার করে সম্মুখে ধরতে হবে। ভগবান বুদ্ধ ব্রহ্মবিহারকে স্থম্পষ্ট করে ধরেছেন—তাকে ছোটো করে ঝাপসা করে সকলের কাছে চলনসই করবার চেষ্টা করেন নি । অপরিমিত মানসে অপরিমিত মৈত্রীকে সর্বত্র প্রসারিত করে দিলে ব্রহ্মের বিহারক্ষেত্রে ব্রহ্মের সঙ্গে মিলন হয় । এই তো হল লক্ষ্য। কিন্তু এ তো আমরা একেবারে পারব না । এইদিকে আমাদের প্রত্যহ চলতে হবে। এই লক্ষ্যের সঙ্গে তুলনা করে প্রত্যহ বুঝতে পারব আমরা কতদূর অগ্রসর হলুম। ঈশ্বরের প্রতি আমার প্রেম জন্মাচ্ছে কি না সে সম্বন্ধে আমরা নিজেকে নিজে ভোলাতে পারি। কিন্তু সকলের প্রতি আমার প্রেম বিস্তৃত হচ্ছে কিনা, আমার শক্রতা ক্ষয় হচ্ছে কিনা, আমার মঙ্গলভাব বাড়ছে কিনা তার পরিমাণ স্থির করা শক্ত নয় । একটা কোনো নিদিষ্ট সাধনার স্বম্পষ্ট পথ পাবার জন্তে মানুষের একটা ব্যাকুলত৷ আছে। বুদ্ধদেব একদিকে উন্ধেগুকে যেমন খর্ব করেন নি তেমনি তিনি পথকেও খুব নিদিষ্ট করে দিয়েছেন । কেমন করে ভাবতে হবে এবং কেমন করে চলতে হবে তা তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন। প্রত্যহ শীলসাধনা দ্বারা তিনি আত্মাকে মোহ থেকে মুক্ত করতে উপদেশ দিয়েছেন এবং মৈত্রীভাবনা দ্বারা আত্মাকে ব্যাপ্ত করবার পথ দেখিয়েছেন । প্রতিদিন এই কথা স্মরণ করে ৰে আমার শীল অথও আছে অচ্ছিন্দ্র আছে এবং প্রতিদিন চিত্তকে এই ভাবনায় নিবিষ্ট করো যে ক্রমশ সকল বিরোধ কেটে গিয়ে আমার আত্মা সর্বভূতে প্রসারিত হচ্ছে । অর্থাৎ একদিকে বাধা কাটছে আর একদিকে স্বরূপ লাভ হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে তে কোনোক্রমেই শূন্ততালাভের পদ্ধতি বলা যায় না। এই তো নিখিললাভের পদ্ধতি, এই তো জায়লাভের পদ্ধতি, পরমাত্মলাভের পদ্ধতি । 蜗 ১১ চৈত্র