পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8eb’ o রবীন্দ্র-রচনাবলী জামরা কি বলতে পারি ময়েই যখন ও বিশেষ আনন্দ পায় তখন ওইটেই ওর পক্ষে শ্রেয় । আমরা বরং এই কথাই বলি যে যাতে স্বাভাবিক স্থখেই মাতালের অমুরাগ জন্মে সেই চেষ্টাই উচিত। যাতে বই পড়তে ভালো লাগে, যাতে লোকজনের সঙ্গে সহজে মিশে ওর মুখ হয়, যাতে প্রাত্যহিক কাজকর্মে ওর মন সহজে নিবিষ্ট হয় সেই পথই অবলম্বন করা কর্তব্য । ষাতে একমাত্র মদের সংকীর্ণ উত্তেজনায় ওর চিত্ত আসক্ত না থেকে জীবনের বৃহৎ স্বভাবক্ষেত্রে সহজভাবে ব্যাপ্ত হয় সেইটে করাই মঙ্গল। ভগবানের ধারণাকে একটা সংকীর্ণতার মধ্যে বেঁধে ভক্তির উত্তেজনাকে উগ্র নেশার মতো করে তোলাই যে মকুন্তত্বের সার্থকতা এ-কথা বলা চলে না । ভগবানকেও তার স্বভাবে পাবার সাধনা করতে হবে তাহলেই সেটা সত্য সাধনা হবে—তাকে আমাদের নিজের কোনো বিকৃতির উপযোগী করে নিয়ে তাকে নিয়ে মাতামাতি করাকেই আমরা মঙ্গল বলতে পারব না। তার মধ্যে একটা কোথাও সত্য চুরি আছে। তার মধ্যে এমন একটা অসামঞ্জস্ত আছে যে, যে-ক্ষেত্রে তার আবির্ভাব সেখানে মোহকে আর ঠেকিয়ে রাখা যায় না। যিনি শক্ত লোক তিনি মদ সহ করতে পারেন তার পক্ষে একরকম চলে যায় কিন্তু তার দলে এসে যারা জমে তাদের আর কিছুই ঠিক-ঠিকানা থাকে না ; তাদের আলাপ ক্রমেই প্রলাপ হয়ে ওঠে এবং উত্তেজনা উন্মাদনার পথে অপঘাত মৃত্যু লাভ করে। ১৬ চৈত্র অখণ্ড পাওয়া ব্ৰহ্মকে পেতে হবে। কিন্তু পাওয়া কাকে বলে ? o সংসারে আমরা অশন বসন জিনিস পত্র প্রতিদিন কত কী পেয়ে এসেছি । পেতে হবে বললে মনে হয় তবে তেমনি করেই পেতে হবে । তেমনি করে না পেলে মনে করি তবে তো পাচ্ছি নে। তখন ব্যস্ত হয়ে ভগবানকে পাওয়াও যাতে আমাদের অন্যান্ত পাওয়ার শামিল হয় সেই চেষ্টা করতে চাই। অর্থাৎ আমাদের আসবাবপত্রের ষে ফর্দটা আছে, যাতে ধরা আছে আমার ঘোড়া আছে গাড়ি আছে আমার ঘটি আছে বাটি আছে তার মধ্যে ওটাও ধরে দিতে হবে আমার একটি ভগবান আছে। কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখার দরকার এই যে ঈশ্বরকে পাবার জন্যে আমাদের আত্মার যে একটি গভীর আকাঙ্ক্ষা আছে সেই আকাঙ্ক্ষার প্রকৃতি কী ? সে কি অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে আরও একটা বড়ে জিনিসকে ৰোগ করবার আকাঙ্ক্ষা ?