পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8) ब्रयौञ्ज-ब्रफ़नांदलौ তাই বলছিলুম জীবনযাত্রার সাধনায় নিজের শক্তির চর্চা যতই করি, ঈশ্বরের চিরপ্রবাহিত অমুকুল দক্ষিণ বায়ুর কাছে সমস্ত পালগুলি একেবারেই পূর্ণভাবে ছড়িয়ে দেবার কথাটা না ভুলি যেন । । ২৪ চৈত্র নমস্তেহস্তু কোনো লতা গোল গোল অঁাকড়ি দিয়ে আপনার আশ্রয়কে বেষ্টন করে, কোনো লতা সরু সরু শিকড় মেলে দিয়ে আশ্রয়কে চেপে ধরে, কোনো লতা নিজের সমস্ত দেহকে দিয়েই তার অবলম্বনকে ঘিরে ফেলে । আমরাও যে-সকল সম্বন্ধ দিয়ে ঈশ্বরকে ধরব তা একরকম নয়। আমরা তাকে পিতাভাবেও আশ্রয় করতে পারি, প্রভূভাবেও পারি, বন্ধুভাবেও পারি। জগতে যতরকম সম্বন্ধস্থত্রেই আমরা নিজেকে বাধি সমস্তের মূলে তিনিই আছেন। যে-রসের দ্বারা সেই সেই সকল সম্বন্ধ পুষ্ট হয় সে রস তারই। এইজন্যে সব সম্বন্ধই তাতে খাটতে পারে, সকল রকম ভাব দিয়েই মানুষ তাকে পেতে পারে। সব সম্বন্ধের মধ্যে প্রথম সম্বন্ধ হচ্ছে পিতাপুত্রের সম্বন্ধ । পিতা যত বড়োই হ’ন আর পুত্র যত ছোটোই হ’ক, উভয়ের মধ্যে শক্তির যতই বৈষম্য থাক তবু উভয়ের মধ্যে গভীরতর ঐক্য আছে। সেই ঐক্যটির যোগেই এতটুকু ছেলে তার এত বড়ো বাপকে লাভ করে । ঈশ্বরকেও যদি পেতে চাই তবে তাকে একটি কোনো সম্বন্ধের ভিতর দিয়ে পেতে হবে, নইলে তিনি আমাদের কাছে কেবলমাত্র একটি দর্শনের তত্ত্ব, প্রায়শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকবেন, আমাদের আপন হয়ে উঠবেন না । তিনি তো কেবল আমাদের বুদ্ধির বিষয় নন, তিনি তার চেয়ে অনেক বেশি ; তিনি আমাদের আপন । তিনি যদি আমাদের আপন না হতেন তা হলে সংসারে কেউ আমাদের আপন হত না, তা হলে আপন কথাটার কোনো মানেই থাকত না । তিনি যেমন বৃহৎ স্বর্ধকে এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর আপন করে এত লক্ষ যোজন ক্রোশের দূরত্ব ঘুচিয়ে মাঝখানে রয়েছেন, তেমনি তিনিই নিজে এক মাছুষের সঙ্গে আর এক মানুষের সম্বন্ধক্ষপে বিরাজ করছেন। নইলে একের সঙ্গে জারের ব্যবধান ষে অনন্ত ; মাঝখানে যদি অনন্ত মিলনের সেতু না থাকতেন তাহলে এই অনন্ত ব্যবধান পার হতুম কী করে।