পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন Ք օվ হে আমার চিত্ত, আজ এই উৎসবের দিনে তুমি একেবারে নবীন হও, এখনই তুমি নবীনতার মধ্যে জন্মগ্রহণ করে, জরাজীর্ণতার বাহ আবরণ তোমার চারদিক থেকে কুয়াশার মতো মিলিয়ে যাক, চিরনবীন চিরস্থদেরকে আজ ঠিক একেবারে তোমার সম্মুখেই চেয়ে দেখো—শৈশবের সত্যদৃষ্টি ফিরে আস্থৰ, জলস্থল আকাশ রহস্তে পূর্ণ হয়ে উঠুক, মৃত্যুর আচ্ছাদন থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে চিরযৌবন দেবতার মতে। করে একবার দেখে, সকলকে অমৃতের পুত্র বলে একবার বোধ করে । সংসারের সমস্ত আবরণকে ভেদ করে আজ একবার আত্মাকে দেখো—কত বড়ো একটি মিলনের মধ্যে সে নিমগ্ন হয়ে নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে, সে কী নিবিড়, কী নিগূঢ়, কী আনন্দময় ! কোনো ক্লাস্তি নেই, জরা নেই, মানতা নেই । সেই মিলনেরই বঁাশি জগতের সমস্ত সংগীতে বেঙ্গে উঠছে, সেই মিলনেরই উৎসবগঙ্গা সমস্ত আকাশে ব্যাপ্ত হয়েছে। এই জগৎজোড়া সৌন্দর্ধের কেবল একটিমাত্র অর্থ আছে, তোমার সঙ্গে তার মিলন হয়েছে সেই জন্যেই এত শোভা, এত মায়োজন। এই সৌন্দর্যের সীমা নেই, এই আয়োজনের ক্ষয় নেই, চিরযৌবন তুমি চিরযৌবন, চিরস্থদরের বাহুপাশে তুমি চিরদিন বাধ, সংসারের সমস্ত পদ সরিয়ে ফেলে সমস্ত লোভ মোহ অহংকারের জঞ্জাল কাটিয়ে আজ একবার সেই চিরদিনের আনন্দের মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করে, সত্য হ’ক তোমার জীবন তোমার জগং, জ্যোতির্ময় হ’ক, অমৃতময় হ’ক । দেখো, আজ দেখো, তোমার গলায় কে পারিজাতের মালা নিজের হাতে পরিয়েছেন—কার প্রেমে তুমি স্বন্দর, কার প্রেমে তোমার মৃত্যু নেই, কার প্রেমের গৌরবে তোমার চারিদিক থেকে তুচ্ছতার আবরণ কেবলই কেটে কেটে যাচ্ছে— কিছুতেই তোমাকে চিরদিনের মতো আবৃত আবদ্ধ করতে পারছে না। বিশ্বে তোমার বরণ হয়ে গেছে—প্রিয়তমের অনন্তমহল বাড়ির মধ্যে তুমি প্রবেশ করেছ, চারিদিকে দিকেদিগন্তে দীপ জলছে, স্বরলোকের সপ্তঋষি এসেছেন তোমাকে আশীৰ্বাদ করতে। আজ তোমার কিসের সংকোচ । আজ তুমি নিজেকে জানে, সেই জানার মধ্যে প্রফুল্প হয়ে ওঠে, পুলকিত হয়ে ওঠে । তোমারই আত্মার এই মহোৎসব-সভায় স্বপ্নাবিষ্টের মতো একধারে পড়ে থেকে না, যেখানে তোমার অধিকারের সীমা নেই সেখানে ভিক্ষুকের মতো উদ্ধবৃত্তি করে না। । o ছে অন্তরভর, অামাকে বড়ো করে জানাবার ইচ্ছ। তুমি একেবারেই সব দিক থেকে ঘুচিয়ে দাও। তোমার সঙ্গে মিলিত করে আমার ষে জান। সেই আমাকে জানাও। আমার মধ্যে তোমার বা প্রকাশ তাই কেবল স্থায়, তাই কেবল মঙ্গল, তাই কেবল নিত্য। আর সমস্তের কেবল এইমাত্র মূল্য যে তারা সেই প্রকাশের উপকরণ। কিন্তু