পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€ रैरे রবীন্দ্র-রচনাবলী २७ cगtैचब्र আজ ক্ষণে ক্ষণে রৌদ্র উকি মারছে, কিন্তু সে যেন তার গারদের গরাদের ভিতর থেকে। তার সংকোচ এখনো ঘুচল না। বাদল-রাজের কালে-উদিপর মেঘগুলো দিকে দিকে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে । আচ্ছন্ন স্বর্ষের আলোয় আমার চৈতন্তের স্রোতস্বিনীতে যেন ভাট পড়ে গেছে। জোয়ার আসবে রৌদ্রের সঙ্গে । পশ্চিমে, বিশেষত আমেরিকায়, দেখেছি বাপমায়ের সঙ্গে অধিকাংশ বয়স্ক ছেলেমেয়ের নাড়ীর টান ঘুচে গেছে। আমাদের দেশে শেষ পর্যন্তই সেটা থাকে। তেমনিই দেখেছি স্বর্ষের সঙ্গে মানুষের প্রাণের যোগ সেদেশে তেমন যেন অস্তরঙ্গভাবে অনুভব করে না। সেই বিরলরৌদ্রের দেশে তার ঘরে স্বর্ষের আলো ঠেকিয়ে রাখবার জন্তে যখন পর্দা কখনো বা অধেক কখনো বা সম্পূর্ণ নামিয়ে দেয়, তখন সেটাকে আমি ঔদ্ধত্য বলে মনে করি । প্রাণের যোগ নয় তো কী । স্বর্ষের আলোর ধারা তো আমাদের নাড়ীতে নাড়ীতে বইছে । আমাদের প্রাণমন আমাদের রূপরস সবই তো উৎসরূপে রয়েছে ওই মহা জ্যোতিষ্কের মধ্যে। সৌরজগতের সমস্ত ভাবীকাল একদিন তো পরিকীর্ণ হয়ে ছিল ওরই বহ্নিবাম্পের মধ্যে। আমার দেহের কোষে কোষে ওই তেজই তো শরীরী, আমার ভাবনার তরঙ্গে তরঙ্গে ওই আলোই তো প্রবহমান । বাহিরে ওই আলোরই বর্ণচ্ছটায় মেঘে মেঘে পত্রে পুষ্পে পৃথিবীর রূপ বিচিত্র, অস্তরে ওই তেজই মানসভাব ধারণ ক’রে আমাদের চিস্তায় ভাবনায় বেদনায় রাগে অমুরাগে রঞ্জিত। সেই এক জ্যোতিরই এত রং এত রূপ এত ভাব এত রস। ওই যে-জ্যোতি আঙরের গুচ্ছে গুচ্ছে এক-এক চুমুক মদ হয়ে সঞ্চিত, সেই জ্যোতিই তো আমার গানে গানে স্বর হয়ে পুঞ্জিত হল। এখনি আমার চিত্ত হতে এই যে চিস্তা ভাষার ধারায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে সে কি সেই জ্যোতিরই একটি চঞ্চল চিন্ময়স্বরূপ নয়, যে-জ্যোতি বনম্পতির শাখায় শাখায় শুদ্ধ ওংকার-ধ্বনির মতে সংহত হয়ে আছে ? * হে স্বৰ্ষ, তোমারই তেজের উৎসের কাছে পৃথিবীর অন্তগূঢ় প্রার্থনা ঘাস হয়ে গাছ হয়ে আকাশে উঠছে, বলছে, জয় হোক। বলছে, অপাৰ্বণু, ঢাকা খুলে দাও । এই ঢাকা খোলাই তার প্রাণের লীলা, এই ঢাকা খোলাই তার ফুলফলের বিকাশ। অপাৰ্বণু, এই প্রার্থনারই নিঝরধারা আদিম জীবাণু থেকে যাত্র করে আজ মানুষের মধ্যে এসে উপস্থিত, প্রাণের ঘাট পেরিয়ে চিত্তের ঘাটে পাড়ি দিয়ে চলল। আমি তোমার দিকে বাহু তুলে বলছি, হে পূষণ, হে পরিপূর্ণ অপাবু, তোমার হিরন্ময় পাত্রের আবরণ