পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় &२a জার্মানিতে গিয়ে দেখা গেল, এক উপায় বেরিয়েছে তাতে হাতের অক্ষর থেকেই ছাপানো চলে। বিশেষ কালি দিয়ে লিখতে হয় এলুমিনিয়মের পাতের উপরে, তার থেকে বিশেষ ছাপার যন্ত্রে ছাপিয়ে নিলেই কম্পোজিটারের শরণাপন্ন হবার দরকার श्ध न । তখন ভাবলেম, ছোটো লেখাকে যারা সাহিত্য হিসাবে অনাদর করেন তারা কবির স্বাক্ষর হিসাবে হয়তে সেগুলোকে গ্রহণ করতেও পারেন। তখন শরীর যথেষ্ট অনুস্থ, সেই কারণে সময় যথেষ্ট হাতে ছিল, সেই মুধোগে ইংরেজি বাংলা এই ছুটকে লেখ+ গুলি এলুমিনিয়ম পাতের উপর লিপিবদ্ধ করতে বললুম। ইতিমধ্যে ঘটনাক্রমে আমার কোনো তরুণ বন্ধু বললেন, “আপনার কিছুকাল পূর্বেকার লেখা কয়েকটি ছোটো ছোটো কবিতা আছে। সেইগুলিকে এই উপলক্ষে ষাতে রক্ষা করা হয় এই আমার একান্ত অনুরোধ।” আমার ভোলবার শক্তি অসামান্ত এবং নিজের পূর্বের লেখার প্রতি প্রায়ই আমার মনে একটা অহেতুক বিরাগ জন্মায়। এইজগুই তরুণ লেখকরা সাহিত্যিক-পদবী থেকে আমাকে যখন বরখাস্ত করবার জন্তে কানাকানি করতে থাকেন তখন আমার মন আমাকে পরামর্শ দেয় যে, “আগেভাগে নিজেই তুমি মানে মানে রেজিগনেশন-পত্ৰ পাঠিয়ে ধংসামান্ত কিছু পেনসনের দাবি রেখে দাও।” এটা যে সম্ভব হয় তার কারণ আমার পূর্বেকার লেখাগুলো আমি যে-পরিমাণে ভুলি সেই পরিমাণেই মনে হয় তারা ভোলবারই যোগ্য । তাই প্রস্তুত হয়েছিলেম, আমার বন্ধু পুরোনো ইতিহাসের ক্ষেত্র থেকে উঞ্চস্বরূপ যা-কিছু সংগ্রহ করে আনবেন আবার তাদেরকে পুরোনোর তমিস্ৰলোকে বৈতরণী পার করে ফেরত পাঠাব। গুটিপাচেক ছোটো কবিতা তিনি আমার সম্মুখে উপস্থিত করলেন। আমি বললেম, “কিছুতেই মনে পড়বে না এগুলি আমার লেখা," তিনি জোর করেই বললেন, “কোনো সংশয় নেই।” আমার রচনা-সম্বন্ধে আমার নিজের সাক্ষ্যকে সর্বদাই অবজ্ঞা করা হয়। আমার গানে আমি মুর দিয়ে থাকি। যাকে হাতের কাছে পাই তাকে সেই সন্তোজাত স্বর শিখিয়ে দিই। তখন থেকে সে-গানের স্বরগুলি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার ছাত্রের। তার পর আমি যদি গাইতে যাই তারা এ-কথা বলতে সংকোচমাত্র করে না যে, আমি ভুল করছি। এ-সম্বন্ধে তাদের শাসন আমাকে বারবার স্বীকার করে নিতে হয়। কবিতা কয়টি ষে আমারই সেও আমি স্বীকার করে নিলেম। পড়ে বিশেষ তৃপ্তি *