পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R SG নরেন্দ্র সেখানে দিন কতক আনাগোনা করিতে লাগিলেন । এইসকল দেখিয়া মােহিনী বড়ো ভালাে বুঝিল না, সে আর সে ঘাটে জল আনিতে যাইত না। সে তখন হইতে মহেন্দ্রর বাগানের ঘাটে জল তুলিতে ও স্নান করিতে যাইত। তৃতীয় পরিচ্ছেদ মোহিনীর ও মহেন্দ্রের মনের কথা “এমন করিলে পারিয়া উঠা যায় না। মহেন্দ্রের বাড়ি ছাড়িয়া দিলাম। ভাবিলাম দূর হােক গে, ও দিকে আর মন দিব না। মহেন্দ্র আমাদের বাড়িতে আসিলে আমি রান্নাঘরে গিয়া লুকাইতাম, কিন্তু আজকাল মহেন্দ্র আবার ঘাটে গিয়া বসিয়া থাকে, কী দায়েই পড়িলাম, তাহার জন্য জল আনা বন্ধ হইবে নাকি । আচ্ছা, নাহয় ঘাটেই বসিয়া থাকিল, কিন্তু অমন করিয়া তাকাইয়া থাকে কেন । লোকে কী বলিবে । আমার বড়ো লজ্জা করে। মনে করি ঘাটে আর যাইব না, কিন্তু না যাইয়া কী করি। আর কেনই বা না যাইব । সত্য কথা বলিতেছি, মহেন্দ্ৰকে দেখিলে আমার নানান ভাবনা আইসে, কিন্তু সে-সব ভাবনা ভুলিতেও ইচ্ছা করে না। বিকাল বেলা একবার যদি মহেন্দ্রকে দেখিতে পাই তাঁহাতে হানি কী । হানি হয় হউক গে, আমি তো না দেখিয়া বঁচিব না | কিন্তু মহেন্দ্ৰকে জানিতে দিব না যে তাহাকে ভালোবাসি, তাহা হইলে সে আমার প্রতি যাহা খুশি তাঁহাই করবে। আর এসকল ভালোবাসাবাসির কথা রাষ্ট্র হওয়াও কিছু নয়- এই তো গেল মোহিনীর মনের কথা । মহেন্দ্ৰ ভাবে- “আমি তো রোজ ঘাটে বসিয়া থাকি, কিন্তু মোহিনী তো একদিনও আমার দিকে ফিরিয়া চায় না। আমি যেদিকে থাকি, সেদিক দিয়াও যায় না, আমাকে দেখিলে শশব্যাস্তে ঘোমটা টানিয়া দেয়, পথে আমাকে দেখিলে প্ৰান্তভাগে সরিয়া যায়, মোহিনীর বাড়িতে গেলে কোথায় পলাইয়া যায়- এমন করিলে বড়ো কষ্ট হয়। আগে জানিতাম মোহিনী আমাকে ভালোবাসে । ভালো না বাসুক, যত্ন করে। কিন্তু আজকাল অমন করে কেন। এ কথা মোহিনীকে জিজ্ঞাসা করিতে হইবে। জিজ্ঞাসা করিতে কী দোষ আছে । মোহিনীকে তো আমি কত কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছি। মোহিনীর বাড়ির সকলে আমাকে এত ভালোবাসে যে, মোহিনীর সহিত কথাবার্তা কহিলে কেহ তো কিছু মনে করে না ।” একদিন বিকালে মোহিনী জল তুলিতে আসিল । মহেন্দ্র যেমন ঘাটে বসিয়া থাকিত, তেমনি বসিয়া আছে । বাগানে আর কেহ লোক নাই। মোহিনী জল তুলিয়া চলিয়া যায়। মহেন্দ্র কম্পিত স্বরে ধীরে ধীরে ডাকিল, “মোহিনী ! মোহিনী যেন শুনিতে পাইল না, চলিয়া গেল। মহেন্দ্র ফিরিয়া আর ডাকিতে সাহস করিল না। আর-একদিন মোহিনী বাড়ি ফিরিয়া যাইতেছে, মহেন্দ্র সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইলেন ; মোহিনী তাড়াতাড়ি ঘোমটা টানিয়া দিল। মহেন্দ্ৰ ধীরে ধীরে ঘর্মািক্তললাট হইয়া কত কথা কহিল, কত কথা বাধিয়া গেল, কোনাে কথাই ভালো করিয়া বুঝাইয়া বলিতে পারিল না। মোহিনী শশব্যান্তে কহিল, “সরিয়া যান, আমি জল লইয়া যাইতেছি।” সেইদিন মহেন্দ্ৰ বাড়ি গিয়াই একটা কী সামান্য কথা লইয়া পিতার সহিত ঝগড়া করিল, নির্দোষী রজনীকে অকারণ অনেকক্ষণ ধরিয়া তিরস্কার করিল, শস্তু চাকরিটাকে দুই-তিন বার মারিতে উদ্যত হইল ও মদ্রের মাত্রা আরো খানিকটা বাড়াইল। কিছুদিনের মধ্যে গদাধরের সহিত মহেন্দ্রের আলাপ হইল, তাহার দিন চারেক পরে স্বরূপবাবুর সহিত সখ্যতা জন্মিল, তাহার সপ্তাহ খানেক পরে নরেন্দ্রের সহিত পরিচয় হইল ও মাসেকের মধ্যে মহেন্দ্র নরেন্দ্রের সভায় সন্ধ্যাগমে নিত্য অতিথিরূপে হাজির शष्ठ व्लाळिन ।