পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

引欧3页 S SV) নরেন্দ্র করুণার কেশগুচ্ছ ধরিয়া নিষ্ঠুর ভাবে প্রহার করিতে লাগিল ; কহিল, “এখনই দূর হইয়া যা ।” ভাবি ছুটিয়া আসিয়া কহিল, “কোথায় দূর হইয়া যাইবে।” এবং স্মরণ করাইয়া দিল যে, ইহা তাহার পিতার বাটী নহে। নরেন্দ্র তাহাকে উচ্চতম স্বরে কহিল, “তুই কী করিতে আইলি ।” ভাবি মাঝে পড়িয়া করুণাকে ছাড়াইয়া লইল ও কহিল, “আমার প্রাণ থাকিতে কেমন তুমি করুণাকে অনুপের বাটী হইতে বাহির করিতে পারো দেখি !” নরেন্দ্র ভবিকে যতদূর প্রহার করিবার করিল ও অবশেষে শাসাইয়া গেল যে, “পুলিসে খবর १ाश्शा निश् (ा ।” ভাবি কহিল, “ইহা তো আর মগের মুলুক নহে।” নরেন্দ্ৰ চলিয়া গেলে পর করুণা ভবির গলা জড়াইয়া ধরিয়া কঁদিতে কঁাদিতে কহিল, “ভবি, আমাকে রাস্তা দেখাইয়া দে, আমি চলিয়া যাই ।” ভাবি করুণাকে বুকে টানিয়া লইয়া কহিল, “সেকি মা, কোথায় যাইবে । আমি যতদিন বাচিয়া আছি ততদিন আর তোমাকে কোনো ভাবনা ভাবিতে হইবে না।” বলিতে বলিতে ভাবি কাদিয়া ফেলিল । করুণা আর একটি কথা বলিতে পারিল না, তাহার বিছানার উপর ঝাপাইয়া পড়িল, বাহুতে মুখ ঢাকিয়া কঁদিতে লাগিল । সমস্ত দিন করুণা কিছু খাইল না, ভবি আসিয়া কত সাধ্যসাধনা করিল, কিন্তু কোনােমতে তাহাকে খাওয়াইতে পারিল না। ’ সমস্ত দিন তো কোনো প্রকারে কাটিয়া গেল। সন্ধ্যা হইল, পল্লীর কুটীরে কুটীরে সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বালা হইয়াছে পূজার বাড়িতে শঙ্খ ঘণ্টা বাজিতেছে। সমস্ত দিন করুণা তাহার সেই শয্যাতেই পড়িয়া আছে, রাত্রি হইলে পর সে ধীরে ধীরে উঠিয়া অন্তঃপুরের সেই বাগানটিতে চলিয়া গেল। সেখানে কতক্ষণ ধরিয়া বসিয়া রহিল, রাত্রি আরো গভীরতর হইয়া আসিয়াছে। পৃথিবীকে ঘুম পাড়াইয়া নিশীথের বায়ু অতি ধীর পদক্ষেপে চলিয়া যাইতেছে ; এমন শান্ত ঘুমন্ত গ্রাম যে মনে হয় না। এ গ্রামে এমন কেহ আছে যে এমন রাত্রে মর্মভেদী যন্ত্রণায় অধীর হইয়া মরণকে আহবান করিতেছে ! করুণার বিজন ভাবনায় সহসা ব্যাঘাত পড়িল । করুণা সহসা দেখিল নরেন্দ্ৰ আসিতেছে। বেচারি ভয়ে থাতমত খাইয়া উঠিয়া বসিল । নরেন্দ্ৰ আসিয়া অতি কৰ্কশ স্বরে কহিল, “আমি উহাকে প্রতি ঘরে খুঁজিয়া বেড়াইতেছি, উনি কিনা বাগানে আসিয়া বসিয়া আছেন! আজ রাত্রে যে বড়ো বাগানে আসিয়া বসা হইয়াছে ? - স্বরূপ তো এখানে নাই ।” r করুণা মনে করিল। এইবার উত্তর দিবে, নিরপরাধিনীর উপর কেন নরেন্দ্রের এইরূপ সংশয় হইলজিজ্ঞাসা করিবে- কিন্তু কী কথা বলিবে কিছুই ভাবিয়া পাইল না। নরেন্দ্রের ভাব দেখিয়া সে ভয়ে আকুল হইয়া একটি কথাও বলিতে পারিল না। নরেন্দ্ৰ কহিল, “আয়, বাড়িতে আর এক মুহুৰ্তও থাকিতে পাইবি না।” করুণা একটি কথাও কহিল না, কিসের অলক্ষিত আকর্ষণে যেন সে অগ্রসর হইতে লাগিল । একবার সে মনে করিল, বলিবে ‘ভবির সহিত দেখা করিয়াই যাই, কিন্তু একটি কথাও বলিতে পারিল না। গৃহের দ্বার পর্যন্ত গিয়া পৌঁছিল, ব্যাকুল হৃদয়ে দেখিল সম্মুখে দিগন্তপ্রসারিত মাঠে জনপ্রাণী না, সে পথ ঘাট কিছুই চিনে না। কিন্তু মুখে কথা সরিল না। ধীরে ধীরে দ্বারের বাহিরে গেল। নরেন্দ্র ক্লািসকালে তােকে যদি গ্রামের মধ্যে দেখতে পাই তবে পুলিসের লোক ডাকাইয়া বাহির dtV יין দ্বার রুদ্ধ হইল, ভিতর হইতে নরেন্দ্র তালা বন্ধ করিল। করুণার মাথা ঘুরিতে লাগিল, করুণা আর দাড়াইতে পারিল না, অবসন্ন হইয়া প্রাচীরের উপর পড়িয়া গেল। কতক্ষণের পর উঠিল। মনে করিল, ভবির সহিত একবার দেখা হইল না ? কতক্ষণ পর্যন্ত শূন্য