পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

y 8S রবীন্দ্র-রচনাবলী এই পত্রে আমার অন্তর্নিহিত যে সৃজনশক্তির কথা লিখিয়াছি, যে শক্তি আমার জীবনের সমস্ত সুখদুঃখকে সমস্ত ঘটনাকে ঐক্যদান তাৎপৰ্যদান করিতেছে, আমার রূপরাপান্তর জন্মজন্মান্তরকে একসূত্ৰে গাঁথিতেছে, যাহার মধ্য দিয়া বিশ্বচরাচরের মধ্যে ঐক্য অনুভব করিতেছি, তাহাকেই জীবনদেবতা’ নাম দিয়া লিখিয়াছিলাম- » ওহে অন্তরতম, মিটেছে কি তব সকল তিয়াষ। আসি অন্তরে মম ? দুঃখসুখের লক্ষ ধারায় নিঠুর পীড়নে নিঙাড়ি বক্ষ দলিত-দ্ৰাক্ষা-সম | কত যে বরন, কত যে গন্ধ, কত যে রাগিণী, কত যে ছন্দ, গাথিয়া গাথিয়া করেছি বয়ন বাসরশয়ন তব তোমার ক্ষণিক খেলার লাগিয়া মুরতি নিত্যনব । আশ্চর্য এই যে, আমি হইয়া উঠিতেছি, আমি প্রকাশ পাইতেছি। আমার মধ্যে কী অনন্ত মাধুর্য আছে, যেজন্য আমি অসীম ব্ৰহ্মাণ্ডের অগণ্যসূর্যচন্দ্ৰগ্ৰহতারকার সমস্ত শক্তি দ্বারা লালিত হইয়া, এই আলোকের মধ্যে আকাশের মধ্যে চোখ মেলিয়া দাড়াইয়াছি- আমাকে কেহ ত্যাগ করিতেছে না । মনে কেবল এই প্রশ্ন উঠে, আমি আমার এই আশ্চর্য অস্তিত্বের অধিকার কেমন করিয়া রক্ষা করিতেছি- আমার উপরে যে প্ৰেম, যে আনন্দ অশ্রান্ত রহিয়াছে, যাহা না থাকিলে আমার থাকিবার কোনাে শক্তিই থাকিত না, আমি তাহাকে কি কিছুই দিতেছি না ? আপনি বরিয়া লয়েছিলে মোরে না জানি কিসের আশৈ । লেগেছে কি ভালো, হে জীবননাথ, আমার নৰ্ম আমার কর্ম তোমার বিজন বাসে ? বরষা, শরতে বসন্তে শীতে ধ্বনিয়াছে হিয়া যত সংগীতে শুনেছি কি তাহা একেলা বসিয়া আপন সিংহাসনে ? মানসকুসুম তুলি অঞ্চলে গেথেছ কি মালা, পরেছ কি গলে, আপনার মনে করেছ ভ্ৰমণ মম যৌবনবনে ?