পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মপরিচয় S8) কী দেখিছ বঁধু মরমমােঝারে রাখিয়া নয়ন দুটি ? করেছ কি ক্ষমা যতেক আমার স্থলন পতন ত্রুটি ? কত বার বার ফিরে গেছে নাথ, অর্ঘ্যকুসুম ঝরে পড়ে গেছে । বিজন বিপিনে ফুটি । যে সুরে বাধিলে এবীণার তার নামিয়া নামিয়া গেছে বার বার, হে কবি, তোমার রচিত রাগিণী আমি কি গাহিতে পারি ? তোমার কাননে সেচিবারে গিয়া সন্ধ্যাবেলায় নয়ন ভরিয়া এনেছি। অশ্রাবারি | যদি এমন হয় যে, আমার বর্তমান জীবনের মধ্যে এই জীবনদেবতার সেবার সম্ভাবনা যতদূর ছিল তাহা নিঃশেষ হইয়া গিয়া থাকে, যে আগুন তিনি জ্বালাইয়া রাখিতে চান আমার বর্তমান জীবনের ইন্ধন যদি ছাই হইয়া গিয়া আর তাহা রক্ষা করিতে না পারে, তবে এ আগুন তিনি কি নিবিতে দিবেন ? এ অনাবশ্যক ছাই ফেলিয়া দিতে কতক্ষণ ? কিন্তু তাই বলিয়া এই জ্যোতিঃশিখা মরিবে কেন ? দেখা তো গিয়াছে, ইহা অবহেলার সামগ্ৰী নহে। অন্তরে অন্তরে তো বুঝা গিয়াছে, ইহার উপরে অনিমেষ আনন্দের দৃষ্টির অবসান নাই। এখনি কি শেষ হয়েছে প্ৰাণেশ, যা-কিছু আছিল মোরযত শোভা যত গান যত প্ৰাণ, জাগরণ ঘুমঘোর ? শিথিল হয়েছে বাহুবন্ধন, মন্দিরাবিহীন মমচুম্বন, জীবনকুঞ্জে অভিসারনিশা আজি কি হয়েছে ভোর ? ভেঙে দাও। তবে আজিকার সভা, আনো নব রূপ, আনো নব শোভা, চিরপুরাতন মোরে। নূতন বিবাহে বাধিবে আমায় নবীন জীবনডোরে । নিজের জীবনের মধ্যে এই-যে আবির্ভাবকে অনুভব করা গেছে- যে আবির্ভাব অতীতের মধ্য হইতে অনাগতের মধ্যে প্রাণের পালের উপরে প্রেমের হাওয়া লাগাইয়া আমাকে কাল-মহানদীর নূতন নূতন ঘটে বহন করিয়া লইয়া চলিয়াছেন, সেই জীবনদেবতার কথা বলিলাম।