পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SGr রবীন্দ্র-রচনাবলী যে শ্রেয় মানুষের আত্মাকে দুঃখের পথে দ্বন্ধের পথে অভয় দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলে সেই শ্রেয়কে আশ্রয় করেই প্রিয়কে পাবার আকাঙক্ষাটি ‘চিত্রায় ‘এবার ফিরাও মোরে কবিতাটির মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যক্তি হয়েছে। বঁশির সুরের প্রতি ধিককার দিয়েই সে কবিতার আরম্ভ যেদিন জগতে চলে আসি, কোন মা আমারে দিলি শুধু এই খেলাবার বাঁশি । বাজাতে বাজাতে তাই মুগ্ধ হয়ে আপনার সূরে দীর্ঘদিন দীর্ঘরাত্রি চলে গেনু একান্ত সুদূরে ছাড়ায়ে সংসারসীমা । মাধুর্যের যে শান্তি এ কবিতার লক্ষ্য তা নয়। এ কবিতায় যার অভিসার সে কে ? কে সে ? জানি না কে । চিনি নাই তারেশুধু এইটুকু জানি-- তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তরপানে ঝড়ঝঞা-বাজপাতে, জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে অন্তর-প্ৰদীপখানি । শুধু জানি, যে শুনেছে কানে তাহার আহবানগীত, ছুটেছে সে নিভীক পরানে সংকট-আবর্তমাঝে, দিয়েছে সে বিশ্ব বিসর্জন, নির্যাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি, মৃত্যুর গর্জন শুনেছে সে সংগীতের মতো । দহিয়াছে অগ্নি তারে, সর্ব প্ৰিয়বস্তু তার অকাতরে করিয়া ইন্ধন চিরজন্ম তারি লাগি জেলেছে সে হােমহুতাশনহৃৎপিণ্ড করিয়া ছিন্ন রক্তপদ্ম অৰ্ঘ্য-উপহারে ভক্তিভরে জন্মশোধ শেষ পূজা পূজিয়াছে তারে মরণে কৃতাৰ্থ করি প্রাণ। এর পর থেকে বিরাটচিত্তের সঙ্গে মানবচিত্তের ঘাত-প্ৰতিঘাতের কথা ক্ষণে ক্ষণে আমার কবিতার মধ্যে দেখা দিতে লাগল। দুইয়ের এই সংঘাত যে কেবল আরামের, কেবল মাধুর্যের তা নয়। অশেষের দিক থেকে যে আহবান এসে পৌঁছয় সে তো বাঁশির ললিত সুরে নয়। তাই সেই সুরের জবাবেই আছে রে। মোহিনী, রে নিষ্ঠুরা, ওরে রক্তলোভাতুরা কঠোর স্বামিনী, দিন মোর দিন তোরে শেষে নিতে চাস হরে আমার যামিনী ? জগতে সবারি আছে সংসারসীমার কাছে কোনোখানে শেষ, কেন আসে মর্মচ্ছেদি সকল সমাপ্তি ভেদি তোমার আদেশ ? বিশ্বজোড়া অন্ধকার সকলেরি আপনার একেলার স্থান, কোথা হতে তারো মাঝে বিদ্যুতের মতো বাজে তোমার আহবান ?