পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মপরিচয় والا তাকে যদি ব্যথাই বলি। তবে শেষ কথা বলা হল না, সেই ব্যথাতেই সৌন্দর্য, তাতেই আনন্দ । যে বোধে আমাদের আত্মা আপনাকে জানে সে বোধের অভু্যদয় হয় বিরোধ অতিক্রম করে, আমাদের অভ্যাসের এবং আরামের প্রাচীরকে ভেঙে ফেলে। যে বোধে আমাদের মুক্তি, দুর্গং পথ্যস্তৎ কবয়ো বদন্তি- দুঃখের দুৰ্গম পথ দিয়ে সে তার জয়ভেরী বাজিয়ে আসে আতঙ্কে সে দিগদিগন্ত কঁপিয়ে তোলে, তাকে শত্রু বলেই মনে করি, তার সঙ্গে লড়াই করে তবে তাকে স্বীকার করতে হয়— কেননা, নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ । ‘অচলায়তনে এই কথাটাই আছে। মহাপঞ্চক । তুমি কি আমাদের গুরু । گھر দাদাঠাকুর । হা । তুমি আমাকে চিনবে না। কিন্তু আমিই তোমাদের গুরু । মহাপঞ্চক । তুমি গুরু ? তুমি আমাদের সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে এ কোনপথ দিয়ে এলে । তোমাকে কে মানবে | দাদাঠাকুর । আমাকে মানবে না জানি, কিন্তু আমিই তোমাদের গুরু । মহাপঞ্চক । তুমি গুরু ? তবে এই শক্রবেশে কেন । দাদাঠাকুর । এই তো আমার গুরুর বেশ ! তুমি যে আমার সঙ্গে লড়াই করবে- সেই লড়াই আমার গুরুর অভ্যর্থনা | মহাপঞ্চক । আমি তোমাকে প্ৰণাম করব না । দাদাঠাকুর । আমি তোমার প্রণাম গ্ৰহণ করব না- আমি তোমাকে প্ৰণত করব । মহাপঞ্চক । তুমি আমাদের পূজা নিতে আস নি। দাদাঠাকুর । আমি তোমাদের পূজা নিতে আসি নি, অপমান নিতে এসেছি। আমি তো মনে করি আজ যুরোপে যে যুদ্ধ বেধেছে। সে ঐ গুরু এসেছেন বলে । তাকে অনেক দিনের টাকার প্রাচীর, মানের প্রাচীর, অহংকারের প্রাচীর ভাঙতে হচ্ছে। তিনি আসবেন বলে কেউ প্রস্তুত ছিল না । কিন্তু তিনি যে সমারোহ করে আসবেন তার জন্যে আয়োজন অনেকদিন থেকে চলছিল। যুরোপের সুদর্শনা যে মেকি রাজা সুবর্ণের রূপ দেখে তাকেই আপনি স্বামী বলে ভুল করেছিল- তাই তো হঠাৎ আগুন জ্বলল, তাই তো সাত রাজার লড়াই বেধে গেল- তাই তো যে ছিল রানী তাকে রথ ছেড়ে, তার সম্পদ ছেড়ে, পথের ধুলোর উপর দিয়ে হেঁটে মিলনের পথে অভিসারে যেতে হচ্ছে। এই কথাটাই ‘গীতালি'র একটি গানে আছে— এক হাতে ওর কৃপাণ আছে আর-এক হাতে হার । ও যে ভেঙেছে তোর দ্বার | আসে নি ও ভিক্ষা নিতে, লড়াই করে নেবে জিতে পরানটি তোমার । VM3 GN (NSCN82 (NSK K || মরণোরি পথ দিয়ে ওই আসছে জীবনমাঝে ও যে আসছে বীরের সাজে । আধেক নিয়ে ফিরবে না রে যা আছে সব একেবারে করবে অধিকার । , ও যে ভেঙেছে তোর দ্বার |