পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVV রবীন্দ্র-রচনাবলী এই-যে দ্বন্দ্ব, মৃত্যু এবং জীবন, শক্তি এবং প্ৰেম, স্বাৰ্থ এবং কল্যাণ- এই-যে বিপরীতের বিরোধ, মানুষের ধর্মবোধই যার সত্যকার সমাধান দেখতে পায়- যে সমাধান পরম শান্তি, পরম মঙ্গল, পরম এক, এর সম্বন্ধে বার বার আমি বলেছি। “শান্তিনিকেতন' গ্ৰন্থ থেকে তার কিছু কিছু উদ্ধার করে দেখামো যেতে পারত। কিন্তু যেখানে আমি স্পষ্টত ধৰ্মব্যাখ্যা করেছি। সেখানে আমি নিজের অন্তরতম কথা না বলতেও পারি, সেখানে বাইরের শোনা কথা নিয়ে ব্যবহার করা অসম্ভব নয় । সাহিত্যরচনায় লেখকের প্রকৃতি নিজের অগোচরে নিজের পরিচয় দেয় সেটা তাই অপেক্ষাকৃত বিশুদ্ধ। তাই কবিতা ७ काटिकट्रोग्ने आका निछि | জীবনকে সত্য বলে জানতে গেলে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে তার পরিচয় চাই। যে মানুষ ভয় পেয়ে মৃত্যুকে এড়িয়ে জীবনকে আঁকড়ে রয়েছে, জীবনের পরে তার যথার্থ শ্রদ্ধা নেই বলে জীবনকে সে পায় নি। তাই সে জীবনের মধ্যে বাস করেও মৃত্যুর বিভীষিকায় প্রতিদিন মরে । যে লোক নিজে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে বন্দী করতে ছুটেছে, সে দেখতে পায়, যাকে সে ধরেছে সে মৃত্যুই নয়, সে জীবন । যখন সাহস করে তার সামনে দাড়াতে পারি নে, তখন পিছন দিকে তার ছায়াটা দেখি । সেইটে দেখে ডরিয়ে ডরিয়ে মরি। নিৰ্ভয়ে যখন তার সামনে গিয়ে দাড়াই তখন দেখি, যে সর্দার জীবনের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় সেই সর্দারই মৃত্যুর তোরণদ্বারের মধ্যে আমাদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। “ফাল্গুনীর গোড়াকার কথাটা হচ্ছে এই যে, যুবকেরা বসন্ত-উৎসব করতে বেরিয়েছে। কিন্তু এ উৎসব তো শুধু আমোদ করা নয়, এ তো অনায়াসে হবার জো নেই। জরার অবসাদ, মৃত্যুর ভয় লঙ্ঘন করে তবে সেই নবজীবনের আনন্দে পৌঁছনো যায়। তাই যুবকেরা বললে, আনব সেই জরা বুড়োকে বেঁধে, সেই মৃত্যুকে বন্দী করে। মানুষের ইতিহাসে তো এই লীলা এই বসন্তোৎসব বারে বারে দেখতে পাই। জরা সমাজকে ঘনিয়ে ধরে, প্রথা অচল হয়ে বসে, পুরাতনের অত্যাচার নূতন প্ৰাণকে দালন করে নিজীব করতে চায়- তখন মানুষ মৃত্যুর মধ্যে বঁপ দিয়ে পড়ে, বিপ্লবের ভিতর দিয়ে নববসন্তের উৎসবের আয়োজন করে। সেই আয়োজনই তো যুরোপে চলছে। সেখানে নূতন যুগের বসন্তের হােলিখেলা আরম্ভ হয়েছে। মানুষের ইতিহাস আপন চিরনবীন অমর মূর্তি প্রকাশ করবে বলে মৃত্যুকে তলব করেছে। মৃত্যুই তার প্রসাধনে নিযুক্ত হয়েছে। তাই 'ফান্ধনীতে বাউল বলছে যুগে যুগে মানুষ লড়াই করেছে, আজ বসন্তের হাওয়ায় তারই ঢেউ - যারা ম'রে অমর, বসন্তের কচি পাতায় তারাই পত্র পাঠিয়েছে। দিগদিগন্তে তারা রটাচ্ছে- “আমরা পথের বিচার করি নি, আমরা পথেয়ের হিসাব রাখি নি, আমরা ছুটে এসেছি, আমরা ফুটে বেরিয়েছি। আমরা যদি ভাবতে বসতুম, তা হলে বসন্তের দশা কী হত ।” বসন্তের কচি পাতায় এই যে পত্র, এ কাদের পত্ৰ ? যে-সব পাতা ঝরে গিয়েছে তারাই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আপন বাণী পাঠিয়েছে। তারা যদি শাখা আঁকড়ে থাকতে পারত, তা হলে জরাই অমর হততা হলে পুরাতন পুঁথির তুলট কাগজে সমস্ত অরণ্য হলদে হয়ে যেত, সেই শুকনো পাতার সর সর ( শব্দে আকাশ শিউরে উঠত। কিন্তু পুরাতনই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আপন চিরনবীনতা প্রকাশ করে, এই তো বসন্তের উৎসব। তাই বসন্ত বলে- যারা মৃত্যুকে ভয় করে, তারা জীবনকে চেনে না ; তারা জরাকে বরণ করে জীবনমৃত হয়ে থাকে, প্ৰাণবান বিশ্বের সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে ||- চন্দ্ৰহাস । এ কী, এ যে তুমি ।- সেই আমাদের সর্দার । বুড়ো কোথায় । সর্দার । কোথাও তো নেই । চন্দ্ৰহাস । কোথাও না ?.. তবে সে কী । সর্দার । সে স্বপ্ন । চন্দ্ৰহাস । তবে তুমিই চিরকালের ? সর্দার । ইহা ।