পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মপরিচয় । চন্দ্ৰহাস । আর আমরাই চিরকালের ? : সর্দার । ইহা । চন্দ্ৰহাস । পিছন থেকে যারা তোমাকে দেখলে তারা যে তোমাকে কত লোকে কত রকম মনে করলে তার ঠিক নেই।--তখন তোমাকে হঠাৎ বুড়ো বলে মনে হল । তার পর গুহার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলে । এখন মনে হচ্ছে যেন তুমি বালক । যেন তোমাকে এই প্রথম দেখলুম। এ তো বড়ো আশ্চর্য, তুমি বারে বারেই প্ৰথম, তুমি ফিরে ফিরেই প্রথম । মানুষ তার জীবনকে সত্য করে, বড়ো করে, নূতন করে পেতে চাচ্ছে। তাই মানুষের সভ্যতায় তার যে জীবনটা বিকশিত হয়ে উঠছে, সে তো কেবলই মৃত্যুকে ভেদ করে । মানুষ বলেছে— মরতে মরতে মরণটারে শেষ করে দে একেবারে, তার পরে সেই জীবন এসে আপন আসন আপনি লবে । মানুষ জেনেছে নয় এ মধুর খেলা, সকাল-সন্ধ্যাবেলা । কতবার যে নিবল বাতি, গর্জে এল ঝড়ের রাতি, সংসারের এই দোলায় দিলে সংশয়েরি ঠেলা । বারে বারে বাধ ভাঙিয়া, বন্যা ছুটেছে, দারুণ দিনে দিকে দিকে, কান্না উঠেছে । ওগো রুদ্র, দুঃখে সুখে, এই কথাটি বাজল বুকেতোমার প্ৰেমে আঘাত আছে নাইকো অবহেলা । আমার ধর্ম কী, তা যে আজও আমি সম্পূর্ণ এবং সুস্পষ্ট করে জানি, এমন কথা বলতে পারি নে— অনুশাসন-আকারে তত্ত্ব-আকারে কোনো পুঁথিতে-লেখা ধর্ম সে তো নয়। সেই ধর্মকে জীবনের মৰ্মকোষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, উদঘাটিত করে, স্থির করে দাড় করিয়ে দেখা ও জানা আমার পক্ষে অসম্ভব- কিন্তু অলস শান্তি ও সৌন্দৰ্যরসভোগ যে সেই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য বা উপাদান নয়, এ কথা নিশ্চয় জানি । আমি স্বীকার করি, আনন্দাদ্ধোব খন্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে এবং আনন্দং প্ৰয়ন্তি অভিসংবিশন্তি- কিন্তু সেই আনন্দ দুঃখকে-বর্জন-করা আনন্দ নয়, দুঃখকে-আত্মসাৎ করা আনন্দ । সেই আনন্দের যে মঙ্গলরাপ তা অমঙ্গলকে অতিক্রম করেই, তাকে ত্যাগ করে নয়, তার যে অখণ্ড অদ্বৈত রূপ তা সমস্ত বিভাগ ও বিরোধকে পরিপূর্ণ করে তুলে তাকে অস্বীকার করে নয়। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত, আলো সেই তো তোমার আলো । সকল দ্বন্দ্ববিরোধমাঝে জাগ্ৰত যে ভালো সেই তো তোমার ভালো।