পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እዓ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সেই দেবতার নাম অবি, তার দ্বারা সমস্তই পরিবৃত— এই-যে সব বৃক্ষ, তারই রূপের দ্বারা এরা হয়েছে সবুজ, পরেছে। সবুজের মালা । · ঋষি কবি দেখতে পেয়েছিলেন কবির প্রকাশকে কবির দৃষ্টিতেই। সবুজের মালা-পরা এই আবির আবির্ভাবের এমন কোনো কারণ দেখানো যায় না। যার অর্থ আছে প্রয়োজনে । বলা যায় না কেন খুশি করে দিলেন। এই খুশি সকল পাওনার উপরের পাওনা। এর উপরে জীবিকাপ্রয়াসী জন্তুর কােনাে দাবি নেই। ঋষি কবি বলেছেন, বিশ্বস্রষ্টা তার অর্ধেক দিয়ে সৃষ্টি করেছেন নিখিল জগৎ । তার পরে ঋষি প্রশ্ন করেছেন, তদস্যাৰ্য্য কতমঃ সা কেতুঃ, তার বাকি সেই অর্ধেক যায় কোন দিকে কোথায় ? এ প্রশ্নের উত্তর জানি। সৃষ্টি আছে প্রত্যক্ষ, এই সৃষ্টির একটি অতীত ক্ষেত্র আছে অপ্রত্যক্ষ । বস্তুপুঞ্জকে উত্তীর্ণ হয়ে সেই মহা অবকাশ না থাকলে অ পেতুম কোনখানে | সৃষ্টির উপরে অসুষ্টের স্পর্শ নামে সেইখানেই, আকাশ থেকে পৃথিবীতে যেমন নামে আলোক । অত্যন্ত কাছের সংস্রবে: কাব্যকে পাই নে, কাব্য আছে রূপকে ধ্বনিকে পেরিয়ে যেখানে আছে স্রষ্টার সেই অর্ধেক যা বস্তুতে আবদ্ধ নয় । এই বিরাট অবাস্তবে ইন্দ্রের সঙ্গে ইন্দ্রসংখ্যার ভাবের মিলন ঘটে । ব্যক্তের বীণাযন্ত্র আপনি বাণী পাঠায় অব্যক্তে । নানা কাজে আমার দিন কেটেছে, নানা আকর্ষণে আমার মন চারি দিকে ধাবিত হয়েছে। সংসারের নিয়মকে জেনেছি, তাকে মানতেও হয়েছে, মূঢ়ের মতো তাকে উদ্ধৃঙ্খল কল্পনায় বিকৃত করে দেখি নি ; কিন্তু এই সমস্ত ব্যবহারের মাঝখান দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে আমার মন যুক্ত হয়ে চলে গেছে সেইখানে যেখানে সৃষ্টি গেছে সৃষ্টির অতীতে ; এই যোগে সার্থক হয়েছে আমার জীবন। একদিন আমি বলেছিলুম মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে । ঋগবেদের কবি বলেছেন অসুনীতে পুনরাত্মাসু চক্ষুঃ পুনঃ প্ৰাণমিহ নো ধেহি ভোগম। অনুমতে মুড়য়া নঃ স্বস্তি । প্ৰাণের নেতা আমাকে আবার চক্ষু দিয়ে, আবার দিয়ে প্রাণ, দিয়ে ভোগ, উচ্চরন্ত সূর্যকে আমি সর্বদা দেখব, আমাকে স্বন্তি দিয়ো । এই তো বন্ধুর কথা, বন্ধুর প্রকাশ ভালো লেগেছে। এর চেয়ে স্তবগান কি আর-কিছু আছে। দেবস্য পশ্য কাব্যম। মন বলছে কাব্যকে দেখো, এ দেখার অন্ত চিন্তা করা যায় না । এখানে এই প্রশ্ন উঠতে পারে, তার সঙ্গে কি আমার কর্মের যোগ হয় নি । হয়েছে, তার প্রমাণ আছে। কিন্তু সে লোহালক্কড়ে বাধা যন্ত্রশালার কর্ম নয় । কর্মরূপে সেও কাব্য। একদিন শান্তিনিকেতনে আমি যে শিক্ষাদানের ব্ৰত নিয়েছিলুম তার সৃষ্টিক্ষেত্র ছিল বিধাতার কাব্যক্ষেত্রে ; আহবান করেছিলুম। এখানকার জল স্থল আকাশের সহযোগিতা। জ্ঞানসাধনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলুম আনন্দের বেদীতে । ঋতুদের আগমনী গানে ছাত্রদের মনকে বিশ্বপ্রকৃতির উৎসবপ্রাঙ্গণে উদবোধিত করেছিলুম। এখানে প্রথম থেকেই বিরাজিত ছিল সৃষ্টির স্বত-উদ্ভাবনার তত্ত্ব। আমার মনে যে সজীব সমগ্রতার পরিকল্পনা ছিল, তার মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিকে রাখতে চেয়েছিলুম সম্মানিত করে । তাই বিজ্ঞানকে আমার কর্মক্ষেত্রে যথাসাধ্য সমাদরের স্থান দিতে চেয়েছি । G30 Wick- go যম্মাদৃতে ন সিধতি যজ্ঞো বিপশ্চিতশ্চন সী ধীনাং যোগামিন্বতি । অর্থাৎ, র্যাকে বাদ দিয়ে বড়ো বড়ো জ্ঞানীদেরও যজ্ঞ সিদ্ধ হয় না। তিনি বুদ্ধিযোগের দ্বারাই মিলিত