পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাত্মা গান্ধী Soዓ ধিককৃত জীবন যাপন করেছিল ; তার পরে ইতালির ত্যাগী যারা, যারা বীর, ম্যাজিনি ও গ্যারিবভি, বিদেশীর অধীনতা-জাল থেকে মুক্তিদান করে নিজেদের দেশকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন । আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রেও দেখেছি। এই স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করবার জন্যে কত দুঃখ, কত চেষ্টা, কত সংগ্ৰাম হয়েছে। মানুষকে মনুষোচিত অধিকার দেবার জন্যে পাশ্চাত্য দেশে কত লোক আপনাদের বলি দিয়েছে। বিভাগ সৃষ্টি করে পরস্পরকে যে অপমান করা হয়, সেটার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যে আজও বিদ্রোহ চলছে। ও দেশের কাছে জনসাধারণ, সর্বসাধারণ, মানগৌরবের অধিকারী ; কাজেই রাষ্ট্ৰতন্ত্রের যাবতীয় অধিকার সর্বসাধারণের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। ও-দেশের আইনের কাছে ধনী দরিদ্র ব্ৰাহ্মণ শূদ্রের প্ৰভেদ নেই। একতাবদ্ধ হয়ে স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার শিক্ষা আমরা পাশ্চাত্যের ইতিহাস থেকে পেয়েছি। সমস্ত ভারতবাসী যাতে আপন দেশকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার পায়, এই যে ইচ্ছে এটা আমরা পশ্চিম থেকে পেয়েছি। এতদিন ধরে আমরা নিজেদের গ্রাম ও প্রতিবাসীদের নিয়ে খণ্ড খণ্ড ভাবে ছোটােখাটাে ক্ষুদ্র পরিধির ভিতর কাজ করেছি ও চিন্তা করেছি। গ্রামে জলাশয় ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের সার্থক মনে করেছি, এবং এই গ্রামকেই আমরা জন্মভূমি বা মাতৃভূমি বলেছি। ভারতকে মাতৃভূমি বলে স্বীকার করার অবকাশ হয় নি। প্রাদেশিকতার জালে জড়িত ও দুর্বলতায় অনুভূত হয়ে আমরা যখন পড়েছিলুম। তখন রানাডে, সুরেন্দ্রনাথ, গোখলে প্রমুখ মহদাশয় লোকেরা এলেন জনসাধারণকে গীেরব দান করার জন্যে। তাদের আরব্ধ সাধনাকে যিনি প্রবল শক্তিতে দ্রুত বেগে আশ্চর্য সিদ্ধির পথে নিয়ে গেছেন সেই মহাত্মার কথা স্মরণ করতে আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি- তিনি হচ্ছেন মহাত্মা গান্ধী । অনেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ইনিই কি প্রথম এলেন। তার পূর্বে কংগ্রেসের ভিতরে কি আরো অনেকে কাজ করেন নি । কাজ করেছেন সত্য, কিন্তু তাদের নাম করলেই দেখতে পাই যে, কত স্নান তাদের সাহস, কত ক্ষীণ তাদের কণ্ঠধবনি । আগেকার যুগে কংগ্রেসওয়ালারা আমলাতন্ত্রের কাছে কখনো নিয়ে যেতেন আবেদন-নিবেদনের ডালা, কখনো-বা করতেন চোখরাঙানির মিথ্যে ভান । ভেবেছিলেন তারা যে, কখনো তীক্ষ্ণ কখনো সুমধুর বাক্যবাণ নিক্ষেপ করে তারা ম্যাজিনি-গ্যারিবল্ডির সমগোত্রীয় হবেন। সে ক্ষীণ অবাস্তব শৌর্য নিয়ে আজ আমাদের গৌরব করার মতো কিছুই নেই। আজ যিনি এসেছেন তিনি রাষ্ট্ৰীয় স্বার্থের কলুষ থেকে মুক্ত । রাষ্ট্ৰতন্ত্রের অনেক পাপ ও দোষের মধ্যে একটি প্রকাণ্ড দোষ হল এই স্বার্থন্বেষণ । হােক-না। রাষ্ট্রীয় স্বাৰ্থ খুব বড়ো স্বাৰ্থ, তবু স্বার্থের যা পঙ্কিলতা তা তার মধ্যে না এসে পারেই না। পোলিটিশ্যান বলে একটা জাত আছে তাদের আদর্শ বড়ো আদর্শের সঙ্গে মেলে না। তারা অজস্র মিথ্যা বলতে পারে ; তারা এত হিংস্ৰ যে নিজেদের দেশকে স্বাতন্ত্র্য দেবার অছিলায় অন্য দেশ অধিকার করার লোভ ত্যাগ করতে পারে না। পাশ্চাত্য দেশে দেখি, এক দিকে তারা দেশের জন্যে প্ৰাণ দিতে পেরেছে, অন্য দিকে আবার দেশের নাম করে দুনীতির প্রশ্রয় দিয়েছে । পাশ্চাত্য দেশ একদিন যে মুষল প্রসব করেছে আজ তারই শক্তি ইউরোপের মস্তকের উপর উদ্যত হয়ে আছে । আজকে এমন অবস্থা হয়েছে যে সন্দেহ হয়, আজ বাদে কাল ইউরোপীয় সভ্যতা টিকবে কি না। তারা যাকে পেট্রিয়টিজম বলছে সেই পেট্রিয়টজমই তাদের নিঃশেষে মারবে। তারা যখন মারবে তখন অবশ্য আমাদের মতো নিজীব ভাবে মারবে না, ভয়ংকর অগ্নি উৎপাদন করে একটা ভীষণ 23 NJ VK AKIGK | আমাদের মধ্যেও অসত্য এসেছে ; দলাদলির বিষ ছড়িয়েছেন পােলিটিশ্যানের জাতীয় ধারা। আজ এই পলিটিক্স থেকেই ছাত্রছাত্রীর মধ্যেও দলাদলির বিষ্ণু প্রবেশ করেছে। পােলিটানরা কেজো লোক। তঁরা মনে করেন যে, কার্য উদ্ধার করতে হলে মিথ্যার প্রয়োজন আছে। কিন্তু বিধাতার বিধানে সে ছলচাতুরী ধরা পড়বে। পেলিটিশ্যানদের এ সব চতুর বিষয়ীদের, আমরা প্রশংসা করতে । পারি। কিন্তু ভক্তি করতে পারি না । ভক্তি করতে পারি মহাত্মাকে, যার সত্যের সাধনা আছে। মিথ্যার সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি সত্যের সার্বভৌমিক ধর্মনীতিকে অস্বীকার করেন নি। ভারতের যুগসাধনায় এ