পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

थिएछद्ररीको &&V) পুরোপুরি জানে না। তৎসত্ত্বে আমি আমার বিদ্যালয়ের ছেলেদের মধ্যে যে আনন্দের ছবি, যে স্বাধীন বিকাশের প্রমাণ পেয়েছি তাতে নিশ্চিত জেনেছি যে, এরা এখান থেকে কিছু পেয়েছে। এই সকল কারণেই আমি এতদিন বাহিরে বেরিয়ে আসি নি । বিশ্বভারতীকে দুইভাবে দেখা যেতে পারে- প্রথম হচ্ছে শান্তিনিকেতনে তার যে কাজ হচ্ছে সেই কাজের দায়িত্ব গ্ৰহণ করা ; দ্বিতীয়ত শান্তিনিকেতনের কর্মানুষ্ঠানের ফল বাইরে থেকে ভোগ করা, তার সঙ্গে বাইরে থেকে যুক্ত হওয়া। বিশ্বভারতীর আইডিয়ালের সঙ্গে যার সহানুভূতি আছে তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের সভ্য হয়ে তার আদর্শ-পোষণের ভার নিতে পারেন । তিনি তার জন্য চিন্তা করবেন, চেষ্টা করে গড়ে তুলবেন, তাকে আঘাত থেকে রক্ষা করবেন । এটা হল এর দায়িত্বের দিক এবং আত্মীয়সমাজের লোকেদের কাজ। এর জন্য বিশ্বভারতীর দ্বার উদঘাটিত রয়েছে। কিন্তু লোকে তো এ কথা বলতে পারে যে, আমাদের এ-সব ভালো লাগে না, বিদেশ থেকে কেন এসব অধ্যাপকদের আনানো ; ভারতবর্ষ তো আপনার পরিধির মধ্যেই বেশ ছিল । যারা এ কথা বলেন তাদের সঙ্গেও আমাদের কোনো বাদপ্রতিবাদ নেই। তঁরা এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কলকাতার এই ‘বিশ্বভারতী সম্মিলনী'র সভ্য হতে পারেন, তাতে কারো। আপত্তি নেই। যদি আমরা কিছু গান সংগ্রহ করে আনি তবে তারা যে তা শুনবেন না। এমন কোনো কথা নেই, কিংবা আমাদের যদি কিছু বলবার থাকে। তবে তাও তারা শুনতে আসতে পারেন- এই যেমন ক্ষিতিমোহনবাবু সেদিন কবীর সম্বন্ধে বললেন, বা আজ যে আচার্য লেভির বিদায়ের পূর্বে তাকে সংবর্ধনা করা হল। এই পণ্ডিত বিদেশী হলেও তো ঐকে বিশেষ কোনো দেশের লোক বলা চলে না- ইনি আমাদের আপনার লোক হয়ে গেছেন, আমাদের দেশকে গভীরভাবে হৃদয়ে গ্রহণ করেছেন । ঐর সঙ্গে যে পরিচয়সাধন হল এতে করে তো কেউ কোনো আঘাত পান নি । বর্তমান যুগে ইতিহাস হঠাৎ যেন নতুন দিকে বাক নেবার চেষ্টা করছে। কেন । আপনার জাতির একান্ত উৎকর্যের জন্য যারা নিয়ত চেষ্টা করছে হঠাৎ তাদের মধ্যে মুষলপর্ব কেন দেখা দিলে। পূর্বে বলেছি, মানুষের সত্য হচ্ছে, আপনাকে অনেকের মধ্যে লাভ করলে তবেই সে আপনাকে লাভ করে । এতদিন ছোটো সীমার মধ্যে এই সত্য কাজ করছিল । ভৌগোলিক বেষ্টন যতদিন পর্যন্ত সত্য ছিল ততদিন সেই বেষ্টনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি আপনার জাতির সকলের সঙ্গে মিলনে নিজেকে সত্য বলে অনুভব করার দ্বারা বড়ো হয়েছে । কিন্তু বর্তমান যুগে সে বেড়া ভেঙে গেছে ; জলে স্থলে দেশে দেশে যে-সকল বাধা মানুষকে বাহির থেকে বিভক্ত করেছিল সে-সব ক্রমশ অপসারিত হচ্ছে। আজ আকাশপথে পর্যন্ত মানুষ চলাচল করছে। আকাশ-যানের উৎকর্ষ ক্রমে ঘটবে, তখন পৃথিবীর সমস্ত স্কুল বাধা মানুষ ডিঙিয়ে চলে যাবে, দেশগত সীমানার কোনো অর্থই থাকবে না । ভূগোলের সীমা ক্ষীণ হয়ে মানুষ পরস্পরের কাছে এসে দাড়িয়েছে। কিন্তু এত-বড়ো সত্যটা আজও বাহিরের সত্য হয়েই রইল, মনের ভিতরে এ সত্য স্থান পেলে না । পুরাতন যুগের অভ্যাস আজও তাকে জড়িয়ে আছে, সে যে সাধনার পাথেয় নিয়ে পথে চলতে চায় তা অতীত যুগের জিনিস ; সুতরাং তা বর্তমান যুগের সামনের পথে চলাবার প্রতিকূলতা করতে থাকবে। বর্তমান যুগে যে সত্যের আবির্ভাব হয়েছে তার কাছে সত্যভাবে না গেলে মার খেতে হবে । তাই আজ মারামারি বেধেছে- নানা জাতির মিলনের ক্ষেত্রেও আনন্দ নেই, শান্তি নেই । কাটাকাটি মারামারি সন্দেহ হিংসা যে পুঞ্জীভূত হয়ে উঠছে তাতেই বুঝছি যে, সত্যের সাধনা হচ্ছে না। যে সত্য আজ মানবসমাজদ্বারে অতিথি তার অভ্যর্থনার সাধনা বিশ্বভারতী গ্ৰহণ করেছে। দারিদ্র্য যতই হােক, বাইরে থেকে দুৰ্গতি তার যতই হােক, এই ভার নেবার অধিকার ভারতবর্ষের আছে । এ কথা আজ বোলো না, "তুমি দরিদ্র পরাধীন, তোমার মুখে এ-সব কথা কেন । আমাদেরই তো। এই কথা । ধনের গীেরব তো এ সত্যকে স্বীকার করতে চায় না। ধনসম্পদ তো ভেদ সৃষ্টি করে, সত্যসম্পাদই ভেদকে অতিক্রম করবার শক্তি রাখে। ধনকে যে মানুষ চরম আশ্রয় বলে বিশ্বাস করে না, যে মৈত্রেয়ীর মতো বলতে পেরেছে, যেনাহং নােমৃতস্যাম কিমহং তেন। কুৰ্যাম, সেই তো ধনঞ্জয়,