পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दिदछन्नली Sዓፄ বড়ো করলেন, প্রেমকে বড়ো করলেন, কাজকে বড়ো করে তুললেন। এই তো আমার ”পরে ভগবানের দয়া- তিনি আমার গর্বকে ছোটো করে দিতেই আমার সাধনা বড়ো করে দিলেন । এখন এই সাধনা কি ছোটাে বাংলাদেশের সীমার মধ্যে আর ধরে। বাংলার বাহির । থেকে ছেলেরা আসতে লাগল। আমি তাদের ডাক দিইনি, ডাকলেও আমার ডাক এত দূরে পৌঁছত না। যিনি সমুদ্রপর থেকে নিজের কষ্ঠে তার সেবকদের ডেকেছেন তিনিই স্বহন্তে তার সেবাক্ষেত্রের সীমানা মিটিয়ে দিতে লাগলেন । আজ আমাদের আশ্রমে প্ৰায় ত্ৰিশ জন গুজরাটের ছেলে এসে বসেছে। সেই ছেলেদের অভিভাবকেরা আমার আশ্রমের পরম হিতৈষী। তারা আমাদের সর্বপ্রকারে যত আনুকুল্য করেছেন, এমন আনুকূল্য ভারতের আর কোথাও পাই নি। অনেক দিন আমি বাঙালির ছেলেকে এই আশ্রমে মানুষ করেছি- কিন্তু বাংলাদেশে আমার সহায় নেই। সেও আমার বিধাতার দয়া। যেখানে দাবি বেশি সেখান থেকে যা পাওয়া যায়। সে তো খাজনা পাওয়া । যে খাজনা পায় সে যদি-বা। রাজাও হয় তবু সে হতভাগ্য, কেননা সে তার নীচের লোকের কাছ থেকেই ভিক্ষা পায় ; যে দান পায় সে উপর থেকে পায়, সে প্রেমের দান, জবরদস্তির আদায়-ওয়াশিল নয় । বাংলাদেশের বাহির থেকে আমার আশ্রম যে আনুকূল্য পেয়েছে, সেই তো আশীৰ্বাদ- সে পবিত্র। সেই আনুকূল্যে এই আশ্রম সমস্ত বিশ্বের সামগ্ৰী হয়েছে । আজ তাই আত্মাভিমান বিসর্জন করে বাংলাদেশাভিমান বর্জন করে বাইরে আশ্রমজননীর জন্য ভিক্ষা করতে বাহির হয়েছি। শ্ৰদ্ধয়া দেয়ম। সেই শ্ৰদ্ধার দানের দ্বারা আশ্রমকে সকলে গ্রহণ করবেন, সকলের সামগ্ৰী করবেন, তাকে বিশ্বলোকে উত্তীর্ণ করবেন। এই বিশ্বলোকেই অমৃতলোক । যা-কিছু আমাদের অভিমানের গণ্ডির, আমাদের স্বার্থের গণ্ডির মধ্যে থাকে তাই মৃত্যুর অধিকারবতী । যা সকল মানুষের তাই সকল কালের । সকলের ভিক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের আশ্রমের উপরে বিধাতার অমৃত বর্ষিত হােক, সেই অমৃত-অভিষেকে আমরা, তার সেবকেরা, পবিত্ৰ হই, আমাদের অহংকার ধৌত হােক, আমাদের শক্তি প্ৰবল ও নির্মল হােক- এই কামনা মনে নিয়ে সকলের কাছে এসেছি ; সকলের মধ্য দিয়ে বিধাতা আমাদের উপর প্রসন্ন হােন, আমাদের বাক্য মন ও চেষ্টাকে তার কল্যাণসৃষ্টির মধ্যে দক্ষিণ হন্তে গ্ৰহণ করুন । (aij# $සෙළු S8 বহুকাল আগে নদীতীরে সাহিত্যচর্চা থেকে জানি নে কী আহবানে এই প্ৰান্তরে এসেছিলেম। তার পর ত্রিশ বৎসর অতীত হয়ে গেল। আয়ুর প্রতি আর অধিক দাবি আছে বলে মনে করি নে। হয়তো আগামী কালে আর কিছু বলবার অবকাশ পাব না। অন্তরের কথা আজ তাই বলবার ইচ্ছা করি। উদ্যোগের যখন আরম্ভ হয়, কেন হয় তা বলা যায় না। বীজ থেকে গাছ কেন হয় কে জানে। দুয়ের মধ্যে কোনো সাদৃশ্য নেই। প্ৰাণের ভিতর যখন আহবান আসে তখন তার চরম অর্থ কেউ জানে গী ! দুঃসময়ে এখানে এসেছি, দুঃখের মধ্যে দৈন্যের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুশোক বহন করে দীর্ঘকাল টলেছি- কেন তা ভেবে পাই নে। ভালো করে বলতে পারি নেকিসের টানে এই শূন্য প্রান্তরের মধ্যে এসেছিলেম । মানুষ আপনাকে বিশুদ্ধভাবে আবিষ্কার করে এমন কর্মের যোগে যার সঙ্গে সাংসারিক দেনাপাওনার হিসাব নেই। নিজেকে নিজের বাইরে উৎসর্গ করে দিয়ে তবে আমরা আপনাকে পাই। বোধ করি সেই ইচ্ছই ছিল, তাই সেদিন সহসা আমার প্রকৃতিগত চিরাভ্যন্ত রচনাকার্য থেকে অনেক পরিমাণে চুটি নিয়েছিলুম। Y R || | \, \,