পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বভারতী Sbrዊ যে, এ বিদ্যালয়ের কোনো বিশেষত্ব যদি অবশিষ্ট না থাকে তবে নিজেকে বঞ্চিত করা হয়। সাধের বেশি অনেক আমাকে এর জন্য দিতে হয়েছে, কেউ সে কথা জানে না- কত দুঃসহ কষ্ট আমাকে স্বীকার করতে হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখে যাকে গড়ে তুলতে হয়েছে সে যদি এমন হয় যা আরো ঢের আছে, অর্থাৎ তার সার্থকতার মানদণ্ড যদি সাধারণের অনুগত হয়, তবে কী দরকার ছিল এমন সমূহ ক্ষতি স্বীকার করবার ? বিদ্যালয় যদি একটা হাই-ইস্কুলে মাত্র পর্যবসিত হয় তবে বলতে হবেঠকসুম । আমার সঙ্গে যারা এখানে শিক্ষকতা আরম্ভ করেছিলেন, এখানকার আদর্শের মধ্যে যারা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিলেন, তাদের অনেকেই আজ পরলোকে । পরবর্তী যারা এখন এসেছেন তাদের শিক্ষকতার আদর্শ দূর থেকে ছাত্রদের পরিচালনা করা, এটা আমার সময় ছিল না। এরকম করে দূরত্ব রেখে অন্তঃকরণকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হয় না । এতে হয়তো খুব দক্ষ পরিচালনা হতে পারে। কিন্তু তার চেয়ে বড়ো জিনিসের অভাব ঘটতে থাকে । এখন অনেক ছাত্র অনেক বিভাগ হয়েছে, সকলই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় চলছে। কমী সমগ্ৰ অনুষ্ঠানটিকে চিন্তার ক্ষেত্রে সেবার ক্ষেত্রে এক করে দেখতে পাচ্ছেন না- বিচ্ছেদ জন্মাচ্ছে । আমার বক্তব্য এই যে, সকল বিভাগই যদি এক প্ৰাণক্রিয়ার অন্তর্গত না হয় তবে এ ভার বহন করা কঠিন । আমি যতদিন আছি ততদিন হয়তো এ বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারি, কিন্তু আমার অবর্তমানে কার আদর্শে চলবে ? আমি এই বিদ্যালয়ের জন্য অনেক দুঃখ স্বীকার করে নিয়েছি- আশা করি আমার এই উদবেগ প্রকাশ করবার অধিকার আছে। এমন প্রতিষ্ঠান নেই যার মধ্যে কিছু নিন্দনীয় নেই, কিন্তু দরদী তা বুক দিয়ে চাপা দেয় ; এমন অনুষ্ঠান নেই যার দুঃখ নেই, বন্ধু তা আনন্দের সঙ্গে বহন করে । দৃঢ় নিষ্ঠার সঙ্গে সকলে একত্র হয়ে যেন আমরা আদর্শের বিশুদ্ধি রক্ষা করি, বিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য বিস্মৃত না হই । ক্রমে বিদ্যালয়ের মধ্যে আর-একটা আইডিয়া প্রবেশ করেছিল- সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে ভারতবর্ষের যোগ। এতে নানা লাভক্ষতি হয়েছে, কিন্তু পেয়েছি আমি কয়েকজন বন্ধু যারা এখানে ত্যাগের অর্ঘ্য এনেছেন, আমার কর্মকে, আমাকে ভালোবেসেছেন । নানা নিন্দা তারা শুনেছেন । বাইরে আমরা অতি দরিদ্র, কী দেখাতে পারি- তবুও বন্ধুরূপে সাহায্য করেছেন। শ্ৰীনিকেতনকে যিনি রক্ষা করছেন তিনি একজন বিদেশী— কী না তিনি দিয়েছেন। অ্যাভূজ, দরিদ্র তবু তিনি যা পেরেছেন দিয়েছেন- আমরা তাকে কত আঘাত দিয়েছি, কিন্তু কখনো তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আমাদের ক্ষতি করেন নি। লেসনি-সাহেব আমাদের পরম বন্ধু, পরম হিতৈষী । কেউ কেউ আজ পরলোকে । এই অকৃত্রিম সৌহার্দ্য সকল ক্ষতির দুঃখে সাত্মনা। একান্তমনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি এই বিদেশী বন্ধুদের কাছে । ৮ পৌষ ১৩৪২ Voj So83 শান্তিনিকেতন Σιν যুরোপে সর্বত্রই আছে বিজ্ঞানসাধনার প্রতিষ্ঠান- ব্যাপক তার আয়োজন, বিচিত্র তার প্রয়াস । আধুনিক যুরোপের শক্তিকেন্দ্র বিজ্ঞানে, এইজন্যে তার অনুশীলনের উদ্যোগ সহজেই সর্বজনের সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু যুরোপীয় সংস্কৃতি কেবলমাত্র বিজ্ঞান নিয়ে নয়- সাহিত্য আছে, সংগীত আছে, নানাবিধ কলাবিদ্যা আছে, জনহিতকর প্রচেষ্টা আছে। এদের কেন্দ্ৰ নানা জায়গাতেই রূপ নিয়েছে। জাতির স্বাভাবিক প্রবর্তনায় । এই সকল কেন্দ্রের প্রধান সার্থকতা কেবল তার কর্মফল নিয়ে নয়। তার চেয়ে বড়ো সিদ্ধি সাধকদের আত্মার বিকাশে । নানা প্রকারে সেই বিকাশের প্রবর্তনা ও আনুকূল্য যদি দেশের মধ্যে