পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ধী, এ দুইই একই শক্তির বিকাশ- ইহা জানিলে জগতের সহিত আমার চেতনার এবং আমার চেতনার সহিত সেই সচ্চিদানন্দের ঘনিষ্ঠ যোগ অনুভব করিয়া সংকীর্ণত হইতে স্বাৰ্থ হইতে ভয় হইতে বিষাদ হইতে মুক্তি লাভ করি। গায়ন্ত্রীমন্ত্রে বাহিরের সহিত অন্তরের ও অন্তরের সহিত অন্তরতমের যোগসাধন করে- এইজন্যই আর্যসমাজে এই মন্ত্রের এত গৌরব : যো দেবেহয়ীে যোহন্দু যো বিশ্বং ভূবনমাবিবেশ । য, ওষধিযু যো বনস্পতিযু তস্মৈ দেবায় নমোনমঃ । ব্ৰহ্মধারণার পক্ষে এই মন্ত্ৰই আমি বালকদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা সরল বলিয়া মনে করি । ঈশ্বর জলে স্থলে অগ্নিতে ওষধি-বিনস্পতিতে সর্বত্র আছেন, এই কথা মনে করিয়া তাহাকে প্ৰণাম করা শান্তিনিকেতনের দিগন্তপ্রসারিত মাঠের মধ্যে অত্যন্ত সহজ । সেখানকার নির্মল আলোক আকাশ এবং প্রান্তর বিশ্বেশ্বরের দ্বারা পরিপূর্ণ, এ কথা মনে করিয়া ভক্তি করা ছেলেদের পক্ষেও কঠিন নহে । এইজন্য গায়ন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে এই মন্ত্রটিও ছেলেরা শিক্ষা করে । গায়ন্ত্রী সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম করিবার পূর্বেও এই মন্ত্রটি তাহারা ব্যবহার করিতে পারে । ছাত্ৰগণ পাঠ আরম্ভ করিবার পূর্বে সকলে সমস্বরে ‘ওঁ পিতা নোহসি উচ্চারণপূর্বক প্ৰণাম করে। ঈশ্বর যে আমাদের পিতা এবং তিনিই যে আমাদিগকে পিতার ন্যায় জ্ঞান শিক্ষা দিতেছেন, ছাত্ৰাদিগকে তাহা প্ৰত্যহ স্মরণ করা চাই । অধ্যাপকেরা উপলক্ষমাত্র, কিন্তু যথার্থ যে জ্ঞানশিক্ষা তাহা আমাদের বিশ্বপিতার নিকট হইতে পাই । তাহা পাইতে হইলে চিত্তকে সর্বপ্রকার পাপ মলিনতা হইতে মুক্ত করিতে হয়, সে জ্ঞান পাইতে হইলে ভক্তিসহকারে ঈশ্বরের কাছে প্ৰত্যহ প্রার্থনা করিতে হয়সেইজন্যই ঐ মন্ত্রে আছে বিশ্বানি দেব সবিতৰ্দরিতানি পরাসুবযদভদ্রং তন্ন আসুব । “হে দেব, হে পিত, আমাদের সমস্ত পাপ দূর করো, যাহা ভদ্র তাঁহাই আমাদিগকে প্রেরণ করো। জন্য মনুষ্যত্নলাভের জন্য প্রস্তুত হইবার ইহাই প্রকৃষ্ট মন্ত্ৰ गनडम९ उष्म आयूय । বক্তৃতা দিতে অনেক সময়েই চিত্তবিক্ষেপ ঘটায়। অধ্যািত্মসাধনায় ভাবান্দোলনের মূল্য যে অধিক তাহা আমি মনে করি না । ভাবাবেশের অভ্যাস মাদকসেবনের ন্যায় চিত্তদীের্কল্যজনক । গভীর তত্বগৰ্ভ সংক্ষিপ্ত প্রাচীন মন্ত্রের ন্যায় ধ্যানের সহায় কিছুই নাই । সাধনার পথে যত অগ্রসর হওয়া যায় এই সকল মস্ত্রের অন্তরের মধ্যে ততই গভীরতর রূপে প্ৰবেশ করা যায়- ইহারা কোথাও যেন বাধা দেয় না ! এইজন্য আমি ছাত্ৰাদিগকে উপনিষদের মন্ত্রে দীক্ষিত করিয়া থাকি । মন্ত্ৰ যাহাতে মুখস্থ কথার মতো না হইয়া যায়। সেজন্য তাহাদিগকে মাঝে মাঝে ব্যাখ্যা করিয়া স্মরণ করাইয়া দিয়া থাকি ! কিছুকাল আমার অনুপস্থিতিবশত নূতন ছাত্ৰাদিগকে মন্ত্র বুঝাইয়া দিবার অবকাশ পাই নাই। আপনার সঙ্গে যে ছাত্রদিগকে লইয়া যাইবেন তাহাদিগকে যদি আহ্নিকের জন্য উপনিষদের কোনো মন্ত্র বুঝাইয়া বলিয়া দেন তো ভালোই হয় । এক্ষণে, আপনার কার্যপ্ৰণালীর কথা বিবৃত করিয়া বলা যাক । মনোরঞ্জনবাবু, জগদানন্দবাবু ও সুবোধবাবুকে * লইয়া একটি সমিতি স্থাপিত হইবে । মনোরঞ্জনবাবু তাহার সভাপতি হইবেন । আপনি উক্ত সমিতির নির্দেশমতে বিদ্যালয়ের কার্যসম্পাদনা করিতে থাকিবেন । বিদ্যালয়ের ছাত্রদের শয্যা হইতে গাত্ৰোথান স্নান আহ্নিক আহার পড়া খেলা ও শয়ন সম্বন্ধে কাল নির্ধারণ র্তাহারা করিয়া দিবেন— যাহাতে সেই নিয়ম পালিত হয় আপনি তাহাই করবেন। ১ মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদানন্দ রায় ও সুবোধচন্দ্র মজুমদায়