পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা মাতৃভূমির যথার্থ স্বরূপ গ্রামের মধ্যেই ; এইখানেই প্রাণের নিকেতন ; লক্ষ্মী এইখানেই তাহার আসন সন্ধান করেন । । সেই আসন অনেককাল প্রস্তুত হয় নাই। ধনপতি কুবের দেশের লোকের মনকে টানিয়াছে শহরের যক্ষপুরীতে। শ্ৰীকে তাহার অন্নক্ষেত্রে আবাহন করিতে আমরা বহুকাল ভুলিয়ছি। সঙ্গে সঙ্গে দেশ হইতে সৌন্দর্য গেল, স্বাস্থ্য গেল, বিদ্যা গেল, আনন্দ গেল, প্রাণও অবশিষ্ট আছে অতি অল্পই। আজ পল্লীর জলাশয় শুষ্ক, বায়ু দূষিত, পথ দুৰ্গম, ভাণ্ডার শূন্য, সমাজবন্ধন শিথিলী, ঈৰ্ষা কলহ কদাচার লোকালয়ের জীৰ্ণতাকে প্রতিমুহূর্তে জীর্ণতর করিয়া তুলিতেছে। সময় আর অধিক নাই। শ্ৰীহীন অনাদৃত দেশে যমরাজের শাসন দিনে দিনে রুদ্রমূর্তিতে প্রবল হইয়া উঠিল। আজ যাহারা জীবধাত্রী পল্লিভূমির রিক্তস্তনে স্তন্য সঞ্চার করিবার ব্ৰত লইয়াছেন, তাহার নিরানন্দ অন্ধকার ঘরে আলো আনিবার জন্য প্ৰদীপ জ্বলিতেছেন, মঙ্গলদাতা বিধাতা তাহদের প্রতি প্ৰসন্ন হউন ; ত্যাগের দ্বারা, তপস্যা-দ্বারা, সেবা-দ্বারা, পরস্পর মৈত্রীবন্ধন -দ্বারা, বিক্ষিপ্ত শক্তির একত্র সমবায়ের দ্বারা ভারতবাসীর বহুদিনসঞ্চিত মৃঢ়তা ও ঔদাসীন্যজনিত অপরাধরাশির সঙ্গে সঙ্গে রুষ্ট দেবতার অভিশাপকে সেই সাধকেরা দেশ হইতে তিরস্কৃত করুন। এই আমি একান্তমনে কামনা করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর