পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবি-কাহিনী কবির সমুদ্র-হৃদি পারে নি পরিতে । স্বাধীন বিহঙ্গ-সম, কবিদের তরে দেবি পৃথিবীর কারাগার যোগ্য নহে কীভূ । অমান সমুদ্র-সম আছে যাহাঁদের মন তাহদের তরে দেবি নহে এ পৃথিবী । তাদের উদার মন আকাশে উড়িতে যায়, পিঞ্জরে ঠেকিয়া পক্ষ নিমে পড়ে পুনঃ, নিরাশায় অবশেষে ভেঙ্গে চুরে যায় মন, জগৎ পুরায় তার আকুল বিলাপে । কবির সমুদ্র-বুক পুরাতে পরিবে কিসে প্ৰেম দিয়া ক্ষুদ্র ওই বনের বালিকা । কাতর ক্ৰন্দনে আহা আজিও বঁকান্দিল কবি, “এখনও পরিল না প্ৰাণের শূন্যতা ।”

  • আরো দাও ভালোবাসা হািদয়ে ঢালিয়া । আমি যত ভালোবাসি তত দাও ভালোবাসা,

নহিলে গো পূরিবে না প্ৰাণের শূন্যতা ।” শুনিয়া কবির কথা কাতরে কহিল বালা, “যা ছিল আমার কবি দিয়েছি সকলিএ হৃদয়, এ পরান, সকলি তোমার কবি, সকলি তোমার প্ৰেমে দেছি বিসর্জন । তোমার ইচ্ছার সাথে ইচ্ছা মিশায়েছি মোর, তোমার সুখের সাথে মিশায়েছি সুখ ।” সে কথা শুনিয়া কবি কহিল কাতর স্বরে, “প্ৰাণের শূন্যতা তবু ঘুচিল না কেন ? ওই হািদয়ের সাথে মিশাতে চাই এ হদি, দেহের আড়াল তবে রহিল গো কেন ? সারাদিন সাধ যায় শুনাই মনের কথা, এত কথা। তবে কেন পাই না খুঁজিয়া ? সারাদিন সাধ যায় দেখি ও মুখের পানে, দেখেও মিটে না কেন উমাখির পিপাসা ? সাধ যায়। এ জীবন প্ৰাণ ভোরে ভালোবাসি, বেসেও প্রাণের শূন্য ঘুচিল না কেন ? আমি যত ভালোবাসি তত দাও ভালোবাসা, নহিলে গো পূরিবে না প্ৰাণের শূন্যতা । একি দেবি ! একি তৃষ্ণা জ্বলিছে হৃদয়ে মোর, ধরায় অমৃত যত করিয়াছি পান, প্ৰকৃতির আছে যত অতুল সৌন্দর্যরাশি, প্ৰণয়ের আছে যত সুধা হতে সুধা, কল্পনার আছে যত তরল স্বগীয় গীতি, সকলি হৃদয়ে মোর দিয়াছি ঢালিয়া 8 96ł