পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 V8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী “বিপন্ন পথিক আমি, কে আছে কুটীরে ?” তবুও উত্তর নাই, নীরব সকল ঠাই— । তটিনী বহিয়া যায় আপনার মনে ! পাদপ আপন মনে প্ৰভাতের সমীরণে দুলিছে, গাইছে গান সরাসরি স্বনে ! বিতরিয়া চারি দিকে পুস্পপরিমল ! আবার পথিকবর আঘাতে দুয়ার-পরধীরে ধীরে খুলে গেল শিথিল অর্গল । বিস্ফারিয়া নেত্ৰদ্ধয় পথিক অবাক রয়, বিস্ময়ে দাড়ায়ে আছে। ছবির মতন । কেন পান্থ, কেন পান্থ, মৃগ যেন দিকভ্ৰান্ত অথবা দরিদ্র যেন হেরিয়া রতন ! কেন গো কাহার পানে দেখিছ বিস্মিত প্ৰাণেঅতিশয় ধীরে ধীরে পড়িছে নিশ্বাস ? তুষারে করিয়া দৃঢ় বহিছে বাতাস ! ক্ৰমে ক্রমে হয়ে শান্ত সুধীরে এগোয় পান্থ, - থর থর করি কঁপে যুগল চরণ ধীরে ধীরে তার পরে সভয়ে সংকোচ ভরে পথিক অনুচ্চ স্বরে করে সম্বোধন— “সুন্দরি ! সুন্দরি !” হায় । উত্তর নাহিক পায় ! আবার ডাকিল ধীরে “সুন্দরি ! সুন্দরি !” কুটীর গভীরে কহে “সুন্দরি ! সুন্দরি ?” তবুও উত্তর নাই, নীরব সকল ঠাই, এখনো পৃথিবী ধরা নীরবে ঘুমায় ! নীরব পরাণশালা, নীরব ষোড়শী বালা, নীরবে সুধীর বায়ু লতারে দুলায় ! পথিক চমকি প্ৰাণে দেখিল চৌদিক-পানেকুটীরে ডাকিছে কেও “কমলা ! কমলা !” অবাক হইয়া রহে, অস্ফুটে কে ওগো কহে ? সুমধুর স্বরে যেন বালকের গলা । পথিক পাইয়া ভয়, চমকি দাড়ায়ে রয়, কুটীরের চারি ভাগে নাই কোনোজন ! এখনো অস্ফুটস্বরে ‘কমলা ! কমলা !” ক’রে কুটীর আপনি যেন করে সম্ভাষণ । কে জানে কাহাকে ডাকে, কে জানে কেন বা ডাকে, কেমনে বলিব কেবা ডাকিছে কোথায় ? সহসা পথিকবর দেখে দণ্ডে করি ভর ‘কমলা ! কমলা ? বলি শুক গান গায় !