পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 VN9 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পৃথ্বীরে জিজ্ঞাসে ‘কে তুমি ? কে তুমি ? মধুর মোহের ভুল, এ মুখের নাই তুলস্বর্গের বাতাস বহে। এ মুখটি চুমি !! . পথিকেরা হদে আসি নাচিছে শোণিত রাশি, অবাক হইয়া বসি রয়েছে। সেথায় ! চমকি ক্ষণেক-পরে কহিল সুধীর স্বরে বিমোহিত পান্থাবর কমলাবালায়, “সুন্দরি, আমি গো পান্থ দিকভ্ৰান্ত পথশ্ৰান্ত উপস্থিত হইয়াছি বিজন কাননে ! কাল হতে ঘুরি ঘুরি শেয়ে এ কুটীরপুরী আজিকার নিশিশেষে পড়িল নয়নে-! বালিকা ! কী কবি। আর, আশ্রয় তোমার দ্বার পান্থ পথহারা আমি করি গো প্রার্থনা । জিজ্ঞাসা করি গো শেষে মৃতে লয়ে ক্রোড়দেশে কে তুমি কুটীরমাঝে বসি সুধাননা ?” পাগলিনীপ্ৰায় বালা হৃদয়ে পাইয়া জ্বালা চমকিয়া বসে যেন জাগিয়া স্বপনে । পিতার বদন-“পরে নয়ন নিবিষ্ট করে স্থির হয়ে বসি রায় ব্যাকুলিত মনে । নয়নে সলিল ঝরে, বালিকা সমুচ্চ স্বরে বিষাদে ব্যাকুলহন্দে কহে “পিতা- পিতা” । কে দিবে উত্তর তোর, প্ৰতিধবনি শোকে ভোর রোদন করিছে সেও বিষাদে তাপিতা । ধরিয়া পিতার গলে আবার বালিকা বলে উচ্চৈস্বরে “পিতা- পিতা”, উত্তর না পায় ! অবিরল নেত্ৰজলে বক্ষ ভাসি যায় । শোকানলে জল ঢালা সাঙ্গ হ’লে উঠে বালা, শূন্য মনে উঠি বসে আঁখি, অশ্রুময় ! বসিয়া বালিকা পরে নিরাখি পথিকবরে সজল নয়ন মুছি ধীরে ধীরে কয়, 晚 “কে তুমি জিজ্ঞাসা করি, কুটীরে এলে কি করি।-- আমি যে পিতারে ছাড়া জানি না কাহারে ! পিতার পৃথিবী এই, কোনোদিন কাহাকেই দেখি নি তো এখানে এ কুটীরের দ্বারে । কোথা হতে তুমি আজ আইলে পৃথিবীমাঝ ? কি বলে তোমারে আমি করি সম্বোধন ? তুমি কি তাহাই হবে পিতা যাহাদের সবে “মানুষ বলিয়া আহা করিত রোদন ? কিংবা জাগি প্ৰাতঃকালে যাদের দেবতা বলে নমস্কার-করিতেন জনক আমার ?