পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O রবীন্দ্র-রচনাবলী وU\ একটি হাভানা চুরুট দিয়েছি। সে জ্বলিয়ে দিব্যি সুস্থ মনে পায়ের ধুলো নিয়ে চুরুট ফুকতে ফুকতে চলে গেল ।” বিজয় বসে ছিলেন, লাফ দিয়ে উঠে বললেন, “বলো সে কোন দিকে গেল, কোথায় তাদের সভা হচ্ছে।” সদু উঠে ঘােড় বেঁকিয়ে বললে, কী ! এমন কথা তোমার মুখ দিয়ে বের হল ! আমি তোমার স্ত্রী হয়েছি, তাই বলে কি পুলিসের চরের কাজ করব । তোমার ঘরে এসে আমি যদি ধর্ম খুইয়ে বসি, তবে তুমিই বা আমাকে বিশ্বাস করবে। কী করে।” ইনসপেক্টর চিনতেন তার স্ত্রীকে ভালো করে। খুব শক্ত মেয়ে, এর জিদ কিছুতেই নরম হবে না। হতাশ হয়ে বসে নিশ্বোস ফেলে বললেন, “হায় রে, এমন সুযোগটাও কেটে গেল !” বসে বসে তার নবাবি ছাদের গোফ-জোড়াটাতে তা দিতে লাগলেন, আর থেকে থেকে ফুসে উঠলেন অধৈৰ্যে। তার জন্য তৈরি দ্বিতীয় দফার খিচুড়ি তার মুখে রুচল না। এই গেল। এই গল্পের প্রথম পালা । সদু স্বামীকে বললে, “কী গো, তুমি যে নৃত্য জুড়ে দিয়েছ ! আজি তোমার মাটিতে পা পড়ছে না । ডিস্ট্রিকটু পুলিসের সুপারিন্টেন্ডের নাগাল পেয়েছ নাকি ৷” “পেয়েছি বৈকি ৷” “কিরকম শুনি ।” “আমাদের যে চর, নিতাই চক্রবর্তী, সে ওদের ওখানে চরগিরি করে । তার কাছে শোনা গেল। আজ মোচকাঠির জঙ্গলে ওদের একটা মস্ত সভা হবে । সেটাকে ঘেরাও করবার বন্দোবস্ত হচ্ছে । ভারী জঙ্গল, আমরা আগে থাকতে লুকিয়ে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে তন্ন তন্ন করে সার্ভে করে নিয়েছি! কোথাও আর লুকিয়ে পালাবার ফাঁক থাকবে না ।” “তোমাদের বুদ্ধির ফাকের মধ্য দিয়ে বড়ো বড়ো ফুটােই থাকবে । অনেক বার তো লোক হাসিয়েছ, আর কেন । এবারে ক্ষান্ত দাও ।” “সে কি কথা সন্দু। এমন সুযোগ আর পাব না ।” “আমি তোমাকে বলছি, আমার কথা শোনো- ও মোচকাঠির জঙ্গল ও-সব বাজে কথা । সে তোমাদেরই ঘরের আনাচে কানাচে ঘুরছে। তোমাদের মুখের উপরে তুড়ি মেরে দেবে দৌড়, এ আমি তোমাকে বলে দিলুম।” “তা, তুমি যদি লুকিয়ে তাদের ঘরের খবর দাও, তা হলে সবই সম্ভব হবে।” “দেখো, আমন চালাকি কোরো না । বােকামি করতে হয় পেট ভরে করো, অনেক বার করেছ, কিন্তু নিজের ঘরের বউকে নিয়ে-” কথাটা চাপা পড়ল চোখের উপর আঁচল চাপার সঙ্গে । “সন্ধু, আমি দেখেছি যে এই একটা বিষয়ে তােমার ঠাট্টাটুকুও সয় না।” “তা সত্যি, পুলিসের ঠাট্টাতেও যে গায়ে দাঁত বসে। এখন কিছু খেয়ে নেবে কি না বলে ।” “তা নেব, সময় আছে, সব একেবারে পাকাপাকি ঠিকঠাক হয়ে গেছে।” “দেখাে, আমি সত্যি কথাই বলব। তােমরা যা কানাকানি কর তা যদি জানতে পারতুম তা হলে ওদের কাছে ফাস করে দেওয়া কর্তব্য মনে করতুম।” “সর্বনাশ, কিছু শুনেছ। নাকি তুমি ” “তোমাদের সংসারে চােখ কান খুলে রাখতেই হয়, কিছু কানে যায় বৈকি।” “কানো যায়, আর তার পরে ?”